খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান খেলাফত মজলিসের ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুদলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে।
মঙ্গলবার বরিশালের চরমোনাইতে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি চরমোনাইয়ের পির ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে সেখানে তারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। দল দুটির মধ্যে আদর্শিক কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যেই জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাই পিরের বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। দল দুটির মধ্যে এই মিতালি আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি সামনে আনেন সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে তারা বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একসময় একদল আরেক দলের বিরোধিতা করেছে, সমালোচনা করেছে, এখন তারা একমত হয়েছে, এতে অস্বাভাবিক কী আছে! আজকে যারা একমত, কালকে তারা একমত না-ও হতে পারে। এটাও ঘটেছে বাংলাদেশে বহুবার, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে! কাজেই এ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তার বা মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারা (জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন) তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে যা উচিত মনে করবে, নিশ্চয়ই তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন আমাদের আন্দোলনের সাথী ছিলেন, একসঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি, যুগপৎ আন্দোলন করেছি এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যারা অত্যন্ত সক্রিয় ছিল, তার মধ্যে খেলাফত মজলিস অন্যতম।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছি। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কী করণীয়, এ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে একমত হয়েই আন্দোলন করেছি বহু বছর ধরে। আমাদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই, আমরা একমতই হয়েছি।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জাতির স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য হওয়ার জরুরি। এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। সাতটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তা হলো জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য আন্তঃদলীয় সংলাপ অব্যাহত রাখা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া; ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত ও ধর্মীয় সম্প্রীতির রক্ষার জন্য সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা; পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা; খুন-গুম-হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা এবং আওয়ামী সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা।
বৈঠকে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের নেতৃত্বের দলটির ৯ জন নেতা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে ছিল খেলাফত মজলিস। ২০২১ সালে তারা জোট ছেড়ে যায়। এরপর এই প্রথম বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসল দলটি।