বাংলাদেশের কিংবদন্তি গোলরক্ষক মো. মহসিন প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ। গত ২৬ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি আর ফেরেননি। তার পরিবার ও ফুটবলাঙ্গনের অনেকে খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি এখন পর্যন্ত। মহসিনের ছোট ভাই কোহিনূর পিন্টু বলেন, ‘আমার বড় ভাই নেই তিন মাস। বাস-ট্রেনে পোস্টারিং করেছি। মতিঝিল, মগবাজারেও পোস্টার লাগানো হয়েছে। রমনা ও কমলাপুর থানায় জিডি করেছি। মিডিয়ায় নিখোঁজ সংবাদও হয়েছে। এরপরও ভাইকে পাচ্ছি না।’

মহসিন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে অন্তত তারকা ক্রীড়াবিদ। অনেক ভক্ত সমর্থক রয়েছে তার। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় চেহারায় পরিবর্তন এসেছে অনেক। ফলে রাস্তা-ঘাটে কেউ দেখলেই সহজেই চেনার পরিস্থিতি নেই। গত কয়েক বছর ধরে মহসিন শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছিলেন। এই বছরেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য দুই দিন পরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এবার তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ায় মহসিনের পরিবার উদ্বিগ্ন বলে জানান পিন্টু, ‘তার কাছে টাকা পয়সা, মোবাইল কিছু নেই। শরীরও অসুস্থ, এতদিন কোথায় কিভাবে আছে ভাবলেই গা শিউরে উঠছে।’

বাংলাদেশ ফুটবলে সোনালী দিনের তারকা গোলরক্ষক মহসিন। খেলা ছাড়ার পর কানাডায় প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। সেখান থেকে ফিরে ঢাকায় বসবাস করছেন ২০১৪ সাল থেকে। বয়স মাত্র ৬১ হলেও শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। মহসিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। অসুস্থ মহসিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসায় এসে পড়েন। মহসিনের বন্ধু-বান্ধব সুস্থতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন একপর্যায়ে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সেরা গোলরক্ষকের আলোচনায় সান্টু-মহসিন-আমিনুলের নাম প্রায় সমানভাবে উচ্চারিত হয়। গোলের খেলা ফুটবলে গোলরক্ষক হয়েও আশি নব্বইয়ের দশকে অনেক বড় তারকা ছিলেন মহসিন। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মহসিনের ১৯৮২ এশিয়ান গেমস থেকে উত্থান। এরপর প্রায় এক যুগ বাংলাদেশ দলের এক নম্বর গোলরক্ষক ছিলেন তিনি।

জাতীয় দলের পাশাপাশি দেশের দুই জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী এবং মোহামেডানেও খেলেছেন দীর্ঘদিন। দুই বড় ক্লাবের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেরও অধিনায়কত্ব করেছেন মহসিন। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও বড় তিন ক্লাবে অধিনায়কত্বের গৌরবের বিষয়টি তিনি স্মরণ করতে পারতেন।

জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক অনেকদিন থেকে নিখোঁজ। যার জন্য উদ্যোগ নেওয়া দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাফুফে ও সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সবার ব্যক্তিগত ও পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যে একজন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ রাজধানী থেকে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *