ফরিদপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) ও নানা ধরনের সাপের আনাগানা বেড়েছে। রাসেলস ভাইপারের কামড়ে গত ছয় মাসে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। পিটিয়ে মারা হয়েছে অন্তত ১২টির অধিক রাসেলস ভাইপার। এতে চরাঞ্চলবাসীদের মধ্যে বেড়েছে সাপের আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ফলে বাদামসহ বিভিন্ন ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ফসল ঘরে তুলতে বাড়তি টাকায়ও মিলছে না শ্রমিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরজুড়ে হয়েছে বাদামের চাষ। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের চরাঞ্চলের বেলে মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সম্প্রতি চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেশি হওয়ায় ভয়ে অনেকেই ক্ষেতে যাচ্ছেন না। বাদাম তুলতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে জমির মালিকরাই তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ছেন।
গত ২১ জুন সর্বশেষ ফরিদপুর সদর উপজলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ৩৮ দাগ এলাকার পরশ উল্লাহ ব্যাপারির ছেলে হোসেন ব্যাপারি (৫০) সাপের কামড়ে মারা যান। যদিও তাকে সময়মতো হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করানোর কারণে মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, চরসহ আশপাশের এলাকায় প্রায়ই দেখা মিলছে রাসেলস ভাইপার সাপের। আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই পিটিয়ে মারছে রাসেলস ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। তবে কেউ কেউ জীবিতও ধরেছেন।
এই রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্কে চরের ফসল তুলতে পারছেন না কৃষকরা। তাদের দাবি, দিনমজুর শ্রমিকরাও কাজে আসতে চাচ্ছেন না সাপের ভয়ে। বাধ্য হয়ে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফসল তুলতে চেষ্টা করছেন।
নর্থচ্যানেল এলাকার পলাশ খান বলেন, চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রধান ফসল বাদাম। বাদাম চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এখন বাদাম তোলার মৌসুম। কিন্তু সাপের আতঙ্ক বেড়েছে। বাদাম তুলতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভয়ে কেউ কাজ করতে চাচ্ছেন না। উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেদের বাদাম নিজেরাই তুলতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, সাপের আতঙ্ক দূর করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। যেকোনো সাপের কামড়ে ওঝার কাছে না নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। সাপ নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। সাপ নিয়ে গুজব না ছড়িয়ে সকলকে সচেতন ও সাবধান থাকতে হবে। চরাঞ্চলের কৃষকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির গামবুট দেওয়া হবে। সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন স্থানে মাইকিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।