গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সব লুটপাটের সুরক্ষা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন। যার মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই পছন্দের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কাজ ও ক্রয়াদেশ দেয়া হয়। দায়মুক্তির এ আইন বাতিলে এবার উচ্চ আদালতে যাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চরম সংকটের সুযোগে ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে পাশ করা হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন। শুরুতে দুই বছরের জন্য করা হলেও পরে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয় দফায় দফায়। প্রতিবারই তীব্র হয় বিশেষজ্ঞ মহল থেকে প্রতিবাদের সুরও।
কিন্তু সে সবে সায় না দিতে সবশেষ ২০২১ সালে চতুর্থ দফায় আনা হয় আইনটির সংশোধনী, বিশেষ বিধানের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত পাওয়া এ আইন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা কারণেই। বিশেষ বিধানকে ঢাল করে গত দেড় দশকে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের ইচ্ছেমতো কাজ দেয়া হয় কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই। স্বচ্ছতাকে পাশ কাটানো এ প্রক্রিয়ায় নির্মাণ হয় শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনালসহ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ছোট-বড় প্রায় সব অবকাঠামো।
এ আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত ৯ ও ১০ নম্বর ধারা। এ দুটি ধারার মাধ্যমে অনুমোদন কিংবা ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এই আইনের আওতায় যতো খুশি ততো ব্যয় দেখিয়ে কোম্পানিগুলো মুনাফা বাড়িয়েছে। যা বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে আরো অস্বচ্ছ, স্বেচ্ছাচারী, লুণ্ঠনমূলক ও জবাবদিহিতাহীন খাতে পরিণত করে বলে মনে করেন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, আইন তৈরি করে যদি বেআইনি কাজ করা যায় তাহলে যে আইন করে বেআইনি কাজ করা হলো সেই আইন করাটাও বেআইনি। এখন যেভাবেই হোক জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সরকারের পালাবদলে এখন আইনটির বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে যেতে চায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। সংগঠনটির আশা, আদালতে এ বিষয়ে প্রতিকার মিলবে।
ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এরকম একটি গণবিরোধী আইন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে তার কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় এ আইন তো দেশে থাকতে পারে না। এ আইনের পক্ষে কোন অজুহাতই দাঁড়িয়ে থাকবে না। ফলে এ আইন বাতিল হবেই।