পর্যায়ক্রমে আইন বাস্তবায়ন হবে, রাতারাতি সম্ভব নয়: বিআরটিএ
নির্দেশনা আসায় আইন প্রয়োগ সহজ হবে: হাইওয়ে পুলিশ
গতিসীমা নজরদারি ও প্রতিপালন নিয়ে সংশয়: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
এভাবে গতিসীমা নির্ধারণ বিজ্ঞানসম্মত নয়: পরিবহন বিশেষজ্ঞ

গত এক যুগে দেশের সড়ক যোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এসময়ে সারাদেশে বহু নতুন সড়ক যেমন নির্মাণ হয়েছে, আবার পুরোনো অনেক সড়ক সংস্কারও করা হয়েছে। ফলে দেশের যে কোনো প্রান্তে চলাচলের ক্ষেত্রে এখন সড়কের দুর্ভোগ অপেক্ষাকৃত অনেকটাই কমে এসেছে। এতে জনমনেও ফিরেছে স্বস্তি।

তবে সড়ক যোগাযোগে দৃশ্যমান অনেক অগ্রগতি হলেও এ খাতের অব্যবস্থাপনা এখনো রয়ে গেছে। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি কাটাতে বা সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে নেই পরিকল্পিত উদ্যোগও। প্রতিনিয়ত যার প্রতিফলন ঘটছে সড়কপথে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪’ জারি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)৷ বুধবার (৮ মে) এ নির্দেশনা জারি হয়৷ দেশের কোন সড়কে, কোন ধরনের যানবাহন কত গতিতে চলবে, তা ঠিক করে দিতেই এ নির্দেশনা জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে৷

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যেই নতুন এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সড়কে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করা কতটা বিজ্ঞানসম্মত৷

সড়ক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংগঠনগুলো বলছে, রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও দুর্ঘটনা রোধে সেটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না৷ বরং একই সড়কে বিভিন্ন গতিতে যানবাহন চলাচলের নির্দেশনায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে৷

বিআরটিএর ওই নির্দেশনায় নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার আর নগর-মহানগরে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৪০ কিলোমিটার৷ জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি ‘এ’) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাসসহ অন্য হালকা যানবাহনগুলোর সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। সেসব সড়কে ট্রাক, মোটরসাইকেল এবং আর্টিকুলেটেড লরির গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

একই সঙ্গে জাতীয় সড়কে (ক্যাটাগরি ‘বি’) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। আর মোটরসাইকেলের জন্য ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরি চলবে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে। পাশাপাশি আন্তঃজেলা সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেল ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারবে।

এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরের ভেতরের রাস্তায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং ট্রাক, মোটরসাইকেল ও আর্টিকুলেটেড লরির গতিসীমা হবে ৩০ কিলোমিটার।

ওই নির্দেশনায় উপজেলা ও গ্রামের রাস্তার গতিসীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার ও আবাসিক এলাকার কাছাকাছি সড়কে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। তা কোনোভাবেই জাতীয় মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৪০ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৩০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহনের গতিসীমা এক্ষেত্রে শিথিল থাকবে।

বিআরটিএ বলছে, দেশে উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটেছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী ও পণ্যবাহী দ্রুতগতির পরিবহনের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। এতে প্রায়শই অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়াভাবে মোটরযান চালানোই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *