জনগণকে সেবা দেওয়ার নামে কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। কর্মকর্তাদের ‍উদ্দেশে তিনি বলেন, ভূমি অফিসে বসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বললে হবে না, মাঠপর্যায়ে এটা বাস্তবে দেখাতে হবে।

সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভূমি অফিসে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিএসআরএফ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি উপদেষ্টা বলেন, কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যায় করলে, জনগণকে সেবা না দিয়ে ভোগান্তি সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহায়তায় এটা কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু সেটা আপনারা করে দেখান। শুধু জিরো টলারেন্স অফিসে বসে বললে হবে না, মাঠপর্যায়ে এটা দেখাতে হবে। ভূমিসেবায় মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, রেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, আইন মন্ত্রণালয়ের আধীনে। রেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রণালয় অধীনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমি বণ্টনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করা হবে। তহশিলদারদের দৌরাত্ম্য থামাতে অনলাইন সুবিধা নিতে হবে। ডিসি ও এসিল্যান্ডকে কঠোরভাবে ভূমি অফিসের দুর্নীতি মোকাবিলার বিষয়টি দেখতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামজারি, খতিয়ান ও ভূমিবিষয়ক আবেদনের সমাধান করার কথা বলেন তিনি।

ভূমি উপদেষ্টা বলেন, মাঠপর্যায়ে ভূমি অফিস ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর (দালাল) অপতৎপরতা ও হয়রানির কারণে নাগরিক সেবাকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে, এটা মানতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রি অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন আনা গেলে একক ব্যবস্থাপনায় ভূমিসেবা বিষয়ক দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পেয়ে জনগণ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, ভূমি অফিসে ১০০ টাকার খাজনা দিতে গিয়ে ১ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিবিড় তদারকি দরকার। আমরা একটা সার্কুলার দিয়ে দেব, যাতে ভূমি অফিসের কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, দুর্নীতিতে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যায়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী। গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।

সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজ চালু হলে ভূমিবিষয়ক মামলা, হানাহানি বন্ধ হয়ে নাগরিকসেবা সুনিশ্চিত হবে।

‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে’

এলজিআরডি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গবেষণা এবং উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকল্পে গঠিত কমিটিতে দেশের স্বনামধন্য কীটতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই দেশে ডেঙ্গু মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে দেশব্যাপী ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. মো. শাহাদাত হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *