উত্তরের গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটারের টানা পথ দাড়িয়াপুর। ছোট্ট বাজারকে পাশ কাটিয়ে একমুখী সড়কে আরও সাত কিলোমিটার যাওয়ার পর যমুনার তীরে কামারজানী লঞ্চঘাট। সদ্যব্যস্ত এ ঘাট থেকে কিছুক্ষণ পরপরই যাত্রীবাহী নৌকা একের পর এক ছুটছে নদীর অথৈ জল কেটে দূরের চরগুলোতে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্যালো মেশিনচালিত নৌকায় গন্তব্য মোল্লারচর।
নদীপথে উজান-ভাটি মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার একটানা যাত্রা। মাঝের একটি অংশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা মিলেছে। চারদিকে শুধু পানি। নেই বসতি, গাছপালা বা প্রাণীকুল। আরও কিছুটা এগিয়ে দেখা মিলবে বিশাল বালুচরের। বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ স্থানটি। সামনে মাত্র দুই কিলোমিটার নদীপথ গেলেই গাইবান্ধার শেষ সীমানা হাতিমারাচর। এরপর শুরু কুড়িগ্রাম জেলার সীমানা।
নির্জন মোল্লারচরে নৌকা ভিড়তেই সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয়ে চোখে পড়বে সাদা বালুকণা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন জ্বলছে। দৃশ্যটি সাধারণ মনে হলেও আসলে তা নয়। কারণ নদীর এ অংশে লুকিয়ে রয়েছে হাজার কোটি টাকার ‘গুপ্তধন’। যা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষণার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানকার বালুতে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থ যথাযথভাবে উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।
গবেষণা যা বলছে
উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে বিভিন্ন নদ-নদীর বালু থেকে ফ্লো-শিট নিরূপণসহ মূল্যবান মিনারেল পৃথক করার জন্য একটি মিনারেল প্রসেসিং (খনিজ পৃথকীকরণ) সেন্টার স্থাপন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। সেখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে ৩-৫ শতাংশ মূল্যবান খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত করে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি (আইএমএমএম)।
মূল্যবান এসব খনিজ আহরণের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি যাচাই করতে রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরএমআইটি) ও কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে পিএইচডি গবেষণা কার্যক্রম চালায় আইএমএমএম ও বিসিএসআইআর। এ গবেষণায় প্রস্তুত করা প্রবন্ধ (থিসিস) একটি আন্তর্জাতিকমানের সমীক্ষা রিপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের ওয়েবসাইটে এ রিপোর্ট প্রকাশের কারণে গুরুত্ব বুঝে নদীর খনিজ উত্তোলনে বহুজাতিক মাইনিং কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইএমএমএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের বেসিনে (বুকে) নতুন করে পাঁচ মিলিয়ন টন মূল্যবান ভারী খনিজ কণিকা জমা হয়। আর এখান থেকেই বছরে কমপক্ষে ২৫০ মিলিয়ন টন (আগে থেকেই জমে থাকা) খনিজসমৃদ্ধ বালু সংগ্রহ করা সম্ভব।