ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে রোববার (২৬ মে) কলকাতায় পৌঁছেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে এই দলে রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ এবং এডিসি শাহীদুর রহমান।
এদিকে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার পরই ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা হারুন অর রশীদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। তিনিও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন।
এই হত্যাকাণ্ড কেন হলো এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরাতো মাত্র পশ্চিমবঙ্গে নামলাম। আমাদের একজন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করে এই দেশের মাটিতেই কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাই বাংলাদেশি। আমাদের দেশে এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এবং বাংলাদেশি পুলিশ নিজেদের মধ্যে সব তথ্যই আদান-প্রদান করেছে। তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল বিশ্বাস তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন আমানুল্লাহ নামে তিনি ভারতে এসেছেন। তার কাছে অনেক তথ্য পেয়েছি।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আমরা কলকাতায় এসেছি। আমরা এখানকার পুলিশের সহায়তা চাইবো। আমাদের দেশের আসামিরা যেসব তথ্য দিয়েছে আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করবো। হত্যাকারীদের অ্যাকচুয়াল মোটিভটা কী তা আমরা খুঁজে বের করবো।
তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ তিনদিন ধরে আমাদের আসামিদের সঙ্গে সামনা-সামনি কথা বলেছে। আমরাও কলকাতার সিআইডির কাছে অনুমতি চাইবো। আমরাও অপরাধীদের সঙ্গে কথা বললে হয়তো ওই আসামিরা যেসব তথ্য দিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে যেসব স্থানের কথা বলেছে তাদের সহযোগিতায় সেগুলো পরিদর্শন করবো। আমার জানামতে, তার লাশ এখনো উদ্ধার হয়নি।
লাশ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আসা প্রকাশ করে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিআইডি অনেক কাজ করছে, অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত তথ্য পেয়ে যাবেন।
বিমানবন্দর থেকে তারা যান নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জানা গেছে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন, ভাঙ্গরে কৃষ্ণ মাটি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে যেতে পারেন গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।
গত ১৩ মে এই অভিজাত আবাসনেই এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে।
জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এমপি আনারের লাশের টুকরো করে ফেলা হয়েছিল ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায়। ফলে লাশের টুকরোর সন্ধান পেতে গত তিন ধরে দফায় দফায় কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খাল ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিআইডি।
এমনকি অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকেও সাথে নিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। খালের পানিতে নামানো হয় কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের। জাল ও যন্ত্রচালিত নৌকা ব্যবহার করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি কিছু। কিন্তু লাশ বা লাশের টুকরো না পেলে খুনের মামলাও দায়ের করতে পারছে না পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডি সূত্রের খবর, জিহাদকে সাথে নিয়ে নিউটাউনের সেই অভিজাত সঞ্জীবা আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে গিয়ে খুনের ঘটনা তদন্ত করতে পারে সিআইডি।
এর আগে রোববার (২৬ মে) সকাল ১০টার একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন প্রতিনিধিদলটি। বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় তারা কলকাতায় পৌঁছান বলে জানা গেছে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে তার মরদেহ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি।