নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের কোরবানি দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আলোকচিত্রী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। তিনি বলেন, নিপীড়ক সরকার তার ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে এই ঘটনা ঘটায়। পার্শ্ববর্তী দেশকে সুযোগ দিতে ও আমাদের দেশের শক্তিশালী দুটি বাহিনীকে (সেনাবাহিনী ও বিডিআর) দুর্বল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শহিদুল আলম বলেন, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় নিয়মিত বিডিআর সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই কথা বলছি। এটা পরিষ্কার যে, এর পেছনে তাপস ও তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জড়িত ছিল। যদিও এটা ৫ আগস্টের আগে বলার সুযোগ ছিল না।

তিনি বলেন, কারাগারে আমার অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকের নাম আমি বলতে পারব। ছোট করে যদি বলি হবিগঞ্জের বিডিআর সদস্য রিয়াজ হোসেন চৌধুরী। সে মামলার ৩১২ নম্বর আসামি। তিনি মেজর শফিকুল ইসলামের বডিগার্ড ছিলেন। বিদ্রোহের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শফিকুল ইসলামের স্ত্রীকে পালাতে সহযোগিতা করে। যাতে তিনি নিরাপদে বের হতে পারেন। শুধু রিয়াজ নয়, তাদের মতো শতশত বিডিআর সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। এসব নিরীহ মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছে। শহীদুল আলম আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিরীহ মানুষগুলোকে নিজের স্বার্থে কোরবানির খাসি বানিয়েছে। এখন যেভাবে চলছে সেটি চলতে থাকলে তাদের (বিডিআর সদস্যদের) আমরা রক্ষা করতে পারব না। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এখন তাদের পাশে দাঁড়ানো।

এ সময় ভোক্তভোগী বিডিআর পরিবারের সদস্যরা ৪ দফা দাবি জানান। সেগুলো হচ্ছে —

১. খুনি হাসিনার প্রহসনমূলক রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলবন্দি সব বিডিআর জোয়ানকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

২. পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. খুনি হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জোয়ানদের অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে তাদেরকে সম্পূর্ণ সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।

৪. স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্যদেরকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদেরকে নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।

একইসঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পূর্বের বিচারের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড, রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *