সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এক যুগ পর ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারামুক্ত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঘরের বাইরে বের হন তিনি। তাঁকে দেখতে অতিথিদের অনেকেই সেখানে ভিড় করেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন তিনি।

এ সময় তাদের পাশাপাশি চেয়ারে বসে কথা বলতে ও হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সেনাকুঞ্জে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত। আজকে আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত যে, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি।

তিনি আরও বলেন, আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত। আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আমরা আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে আসেন।
খালেদা জিয়ার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের পাইলট কার। আর পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপি কর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে মুক্তি দেন তাঁকে। সাময়িক মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে কখনও বাসা থেকে বের হননি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায়নি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তাঁর আসনে বসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খানসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছিল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া তাঁর জীবনের বড় সময়টা দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য। ১২ বছর পরিকল্পিতভাবে তাঁকে দেশের সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
গতকাল সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে এয়ার চিফ ও নেভাল চিফকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে সম্মান তাঁকে দেখিয়েছেন, তাতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ, তেমনি গোটা জাতি আনন্দিত হয়েছে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে উপদেষ্টাদের সাক্ষাৎ
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া;  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
গতকাল সন্ধ্যায় ফেসবুকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিজের কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ছবিতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকেও দেখা গেছে। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *