খুলনার অপরাধ জগতের সম্রাট খ্যাত শিমুল ভূঁইয়া এলাকাবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। এখনো তার নামে ওই অঞ্চলে চলে অন্ধকার দুনিয়ার সব কায়কারবার। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আর ভাই শরীফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে শিপলু ভূঁইয়া ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। খুলনার এই ভূঁইয়া পরিবারের খুনের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ঘটনাটি এখন সারাদেশে আলোচনায়। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার নাম। যাকে এমপি আনারের ভাড়াটে খুনি বলছে পুলিশ। ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর শিমুল ভূঁইয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন, তার নাম সৈয়দ আমানুল্লাহ।

কিন্তু খুলনার শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া কীভাবে হয়ে ওঠেন সৈয়দ আমানুল্লাহ? কীভাবেইবা খুনের রাজনীতিতে তার উত্থান? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম শীর্ষ নেতা। ভাই শিপলু ভূঁইয়া ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর শিমুলের পাসপোর্টে বসিয়ে দেওয়া হয় আমানুল্লাহ নামটি। আমানুল্লাহ নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তিনি ভারতে যাওয়া-আসা করতেন।

এমনকি ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করতে একই ভুয়া নামে জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) বানিয়ে নেন শিমুল। শিমুল থেকে আমানুল্লাহ হয়ে ওঠা এবং কীভাবে তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ও ভুয়া এনআইডি তৈরি করলেন, এগুলোই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এসেছে।

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুল ছাড়াও তার পরিবারের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- শিমুলের স্ত্রী সাবিনা মুক্তা, বড় ভাই লাকি ভূঁইয়া ও ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া।

এদিকে, আনার খুনের ঘটনায় শিমুল ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর আবারও আলোচনায় এসেছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার এ পরিবারের ইতিহাস। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দামোদরের অন্য প্রভাবশালী সরদার পরিবারের সঙ্গে ভূঁইয়া পরিবারের দ্বন্দ্ব অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এ দ্বন্দ্ব কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দুই পরিবারের চারজন খুন হয়েছেন। তবু দুই পরিবারের দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি।

এলাকাবাসী ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে ফুলতলা উপজেলা নকশাল বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। তখন নকশাল সদস্যদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে ভূঁইয়া পরিবারের। এ নিয়ে এলাকার সরদার পরিবারের সঙ্গে ভূঁইয়াদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই সময়ই মেধাবী শিক্ষার্থী শিমুল ভূঁইয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।

দামোদরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার ছয় ছেলের মধ্যে চতুর্থ ফজল ভূঁইয়া ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে সৈয়দ আমানুল্লাহ। শিমুল ১৯৮৫ সালে দামোদর এমএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর দৌলতপুরের দিবা নৈশ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিদ্যালয়ে।

এদিকে, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে গিয়ে চারদিন ধরে নিখোঁজ মর্মে গত রোববার (১৯ মে) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানায় তার পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে ডিবিকে ওইদিন জানানো হয়, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ মে) থেকে এমপি আনোয়ারুলের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ নিয়ে তারা ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।

এর মধ্যেই বুধবার (২২ মে) সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। তবে তার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *