প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোনো মতে পাস করে চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য আমরা নানান সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এসব সুবিধা আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিতে হবে।’
নারী উদ্যোক্তা আরও বাড়াতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নারীদের আরও বেশি সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে নারী-পুরুষ সমান তালে এগিয়ে যাবে। নারীদের গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।’
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ থেকে ২০২১ সালের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করেছি। এরই মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। একসময় এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই বড় হবে। তারা উপকৃত হবে, দেশ উপকৃত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানান পণ্য উৎপাদন হয়। এগুলো দেশের অভ্যন্তরে বাজারজাত করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। নিজের দেশের চাহিদা বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। পাশাপাশি দেশের ভেতরে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। পদ্মার ওপারে বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সেখানে এসএমই উদ্যোক্তারা কাজ করতে পারেন।
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করা, তাদের সুযোগ সুবিধা দেখা, এসব করলে তাদের থেকে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন।’
শিল্পের প্রসারে পরিবেশ সুরক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই। শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সামান্য কয়টা টাকা বাঁচাতে গিয়ে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয়। আমরা চাই শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক, কিন্তু পরিবেশ নষ্ট না করে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মাহমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এখন আবার যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের হামলা। এসবের ফলে নানান সংকটে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। আমরা সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি এখানে দেখছি উদ্যোক্তাদের ৬০ ভাগ নারী। এটা দেখে আমি খুব খুশি। কারণ একটা দেশের বড় অংশকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। তাদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। উভয়ে সমান তালে এগোলো দেশ এগোবে। পুরুষরাও চাইলে স্ত্রী, মায়ের নামে উদ্যোগ নিয়ে এসএমই ঋণের সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ তারা নিজের নামে তো ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন না। নারীদের নামে করলে পাবেন। আমি বলবো, পুরুষরা চাইলে সে সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ আমরা চাই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বাড়ুক।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কর্মক্ষমতা ও উদ্যম কাজে লাগাতে পারলে তারা সোনার মানুষ হবে। এরাই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবে। আমরা এরই মধ্যে ১০০টা ইকোনমিক জোন করেছি। শুধু বিদেশি বিনিয়োগ নয়, দেশি বিনিয়োগও চাই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ইকানমিক জোনে জায়গা নিয়ে কাজ করতে পারেন।
বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।