‘কয়েকদিন থাকি ঠান্ডা পড়ছে হাত-পাও খালি শিষ্ঠি নাগি আইসে (জড়সড় হয়ে আসা)। হামাক কাউয়ো এলাও (কেউ একটা) কম্বল দেয় নাই। কাজোত না গেইলে খামো কি? ছাওয়ারা তো হামাক দ্যাখে না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের এলাকার বৃদ্ধা লুৎফর ইসলাম (৬৪) ও মজিবর রহমান (৭৪)। দিনমজুর লুৎফর ও মজিবরের মতো খেটে-খাওয়া অনেক মানুষই শীতের তীব্রতার কথা জানিয়েছেন। নিম্ন আয়ের কেউ কেউ এ শীতকে ‘অসহনীয়’ বলছেন।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকার আয়নাল হক (৬০) বলেন, ‘এমন ঠান্ডায় বার্ধক্য নিয়ে কাজ যেতে হয়। শরীরে শক্তি পাইনে। কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা খালি টাডায় কোদাল ধরতে ইচ্ছে করে না! কিন্তু কাজ না করলে কী খেয়ে বাঁইচমো।’

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে আসা উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার সন্তানের দুই দিন থাকি জ্বর ও ডায়েরিয়া হয়েছে। তাই এখানে ভর্তি করেছি। এখানে আসি দেখি যত রোগী, জায়গা নাই কোনো রকমে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ জীবিকার সন্ধানে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ধরলা নদীরপাড়ে আসা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর এলাকার জয়নাল আবেদীন (৬০) বলেন, ‘ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে। কয়েকদিন থাকি খুব ঠান্ডা পড়ছে, সহ্য করা যাচ্ছে না। ঠান্ডায় ভাড়াও ঠিকমতো হয় না। তিন বেলার খাবার যোগানো মুশকিল হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মনজুর এ মুর্শেদ বলেন, হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে আসা বেশির ভাগ শিশু। এ ছাড়া বয়স্করা অ্যাজমাসহ ঠান্ডাজনিত কারণে ভর্তি হচ্ছেন। আমি বলব, যাদের এসব রোগ হচ্ছে তারা যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আসবেন এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ এবং পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, শীতার্তদের জন্য মোট ১২ হাজার কম্বল ও ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে ২৭ লাখ টাকার শীতবস্ত্র ও ১২ হাজার কম্বল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট টাকারও শীতবস্ত্র বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আজ শুক্রবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রায় আরও কমতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *