হলো না আরেকটি আফগান রূপকথার জন্ম। সেমিফাইনালেই থেমে যেতে হলো রশিদ খানদের দৌড়। আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা। যে কোনো বিশ্বকাপে এবারই প্রথম ফাইনালে উঠতে পারলো প্রোটিয়ারা।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে ১১.৫ ওভারেই ৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে কুইন্টন ডি ককের উইকেট হারায় শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ৮.৫ ওভারেই ৬০ রান করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

৯ম ওভারের চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে ছক্কা ও বাউন্ডারি মেরে প্রোটিয়াদের জয় নিশ্চিত করেন ওপেনার রিজা হেন্ডরিক্স। ২৫ বলে ২৯ রানে হেন্ডরিক্স এবং ২১ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম।

বর্ণবাদের কারণে ২২ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর থেকেই শুধু তাদের হতাশার গল্প। কখনো বৃষ্টি, কখনো নিজেদের আচানক ব্যর্থতা- সব মিলিয়ে কখনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের ওপর উঠতে পারেনি তারা। সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল, ১৯৯৮ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (তখন নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি) চ্যাম্পিয়ন।

প্রায়ই বৃষ্টির কারণে বিশ্বকাপের কোনো একটি পর্যায় থেকে বিদায় নিতে হতো প্রোটিয়াদের। এছাড়া প্রবল পরাক্রমশালী একটি দল নিয়ে এসেও কোনো না কোনে একটি পর্যায়ে খারাপ খেলে বিদায় নিতে হতো তাদেরকে। যে কারণে নাম হয়ে গিয়েছিলো, চোকার্স।

এবার আর কোনো কিছু দমিয়ে রাখতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। না বৃষ্টি, না হঠাৎ বাজে একটি দিন। দু’একটি ম্যাচ যে বৃষ্টির কবলে পড়েনি তা নয়। কিন্তু এবার আর সে সবকে ধারে কাছেও জায়গা দেয়নি প্রোটিয়ারা। ঠিকই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে উঠে গেলো ফাইনালে।

এর আগে ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নামে রশিদ খানের দল। ত্রিনিদাদে ব্যাট করতে নেমে বাস্তবতা টের পায় আফগানরা। প্রোটিয়া বোলিংয়ের সামনে পুরোপুরি খেই হারিয়ে বসে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা এবং তাবরিজ শামসির তোপের মুখে পড়ে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে আফগানিস্তান।

আফগানিস্তানের ব্যাটাররা মোটেও দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। আজমতউল্লাহ ওমরজাই সর্বোচ্চ ১০ রান করেন। আর কোনো ব্যাটারই দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি।

আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লেখাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশেষে তাদের নামের পাশ থেকে ঘুচবে চোকার্স তকমা।

গ্রুপ পর্ব এবং সুপার এইটে যেভাবে খেলেছে আফগানরা, সেমিফাইনালে তার ছিটেফোটাও দেখাতে পারলো না। ত্রিনিদাদের উইকেট কেমন আচরণ করতে পারে সেটাও হয়তো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। যে কারণে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিয়েছে তারা।

কিন্তু ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের শেষ বলে মার্কো ইয়ানসেনকে উইকেট দিয়ে আসেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। রিজা হেন্ডরিক্সের হাতে ক্যাচ দেন কোনো রান না করেই। এরপর গুলবাদিন নাইব (৯), ইবরাহিম জাদরান (২), মোহাম্মদ নবি (০)- একে একে আউট হতে থাকেন। নানগেয়ালিয়া খারোত ৭ বলে করেন ২ রান। আজমত উল্লাহ ওমরজাই ১০, করিম জানাত ১৩ বলে ৮ রান করে আউট হন।

রশিদ খান ৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৮ রান করে নরকিয়ার বলে বোল্ড হয়ে যান। নুর আহমদ আউট হন কোনো রান না করেই। সর্বশেষ নাভিন-উল হক এলবিডব্লিউ আউট হতেই শেষ হয়ে যায় সেমিফাইনালে আফগানদের ব্যাটিং দৌড়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *