মিলিমিটারকে মনে আছে? যে কিনা বড় হয়ে নিজেকে ‘সেন্টিমিটার’ বলেছিল নিজেই! রাজকুমার হিরানির মাস্টারপিস ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর এই চরিত্রকে মনে না রেখে উপায় নেই। মুখ্য চরিত্রদের মধ্যে কেউ ছিল না এই মিলিমিটার, কিন্তু তাকে ছাড়া এই ছবি যেন ভাবাই যায় না। আইকনিক সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ১৫ বছর পেরোল। সেই উপলক্ষেই সম্প্রতি এই ছবির শুটিংয়ের স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন মিলিমিটার অর্থাৎ রাহুল কুমার। এখন অবশ্য মিলিমিটার থেকে সেন্টিমিটার পেরিয়ে ইঞ্চিতে পৌঁছে গেছেন তিনি।
বছর ত্রিশের রাহুল জানিয়েছেন, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ছবি ছিল এই থ্রি ইডিয়টস।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে রাহুল কুমার মিলিমিটার চরিত্রে অভিনয় করেন। তখন তার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না, এই ছবি জীবনে কতটা পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বর্তমানে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাহুল। ‘থ্রি ইডিয়টস’ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তখন জানতাম না, ঠিক কী করছি বা কী বলছি। কিন্তু এখন বুঝি, এই ছবিটিই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।’
তবে থ্রি ইডিয়টস প্রথম নয়। আরও ছোটবেলায় অভিনয়ের পথে যাত্রা শুরু করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘৬ বছর বয়সে আমি বিশাল ভরদ্বাজের দ্য ব্লু আমব্রেলা ছবির জন্য নির্বাচিত হই। এরপর ওমকারা সিনেমাতেও একটি ছোট ছেলের চরিত্রে অভিনয় করি।’ তবে থ্রি ইডিয়টসের জন্য তাকে প্রথমে বাছাই করা হয়নি। রাহুল বলেন, ‘থ্রি ইডিয়টসের জন্য প্রায় ৮০০ জন শিশুর অডিশন নেওয়া হয়েছিল। আমি তখন উত্তরাখণ্ডের একটা বিয়ে বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ অডিশনের জন্য ডাকা হয়। মুম্বাই এসে অডিশন দেই। তারপরে সিলেক্টেড হই এবং বেঙ্গালুরুতে শুটিংয়ে যোগ দিই।’
রাহুল জানান, শুটিংসেটে তিনি সকলের প্রিয় ছিলেন। আমির খানকে মজা করে ওস্তাদ বলে ডাকতেন তিনি। বলেন, ‘সেটে মাধবন স্যার, শরমন স্যার এবং রাজু স্যার (পরিচালক) প্রচুর সাহায্য করেছেন। আজও আমরা যোগাযোগ রাখি। রাজু স্যার আমার খুব ভালো বন্ধু। কাজ নিয়ে কোনো সংশয় থাকলে আমি তাকে ফোন করি, সবসময় উত্তর দেন।
রাহুল আরও মনে করেন, আমির খানের হাসিঠাট্টা ভোলার মতো নয়। তিনি বলেন, ‘একদিন আমির স্যার আমাকে কারিনা ম্যামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বলেন, এই ছেলেটি ওমকারায় ছিল, আর এখন এত বড় হয়ে গেছে যে বিয়েও করে ফেলেছে! এটা যে মজা, সেটা কারিনা ম্যাম বুঝতেই পারেননি। পরে অনেক সময় লেগেছিল এটা মিথ্যা বলে বিশ্বাস করাতে।’
তিনি আরও একটি মজার ঘটনার কথা বলেন। আমির স্যার একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রিয় নায়িকা কে?; আমি বললাম, ‘সবাই ভালো।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কারিনা কেমন?’ আমি বললাম, ‘ভালো।’ এরপর তিনি বললেন, ‘রানি মুখার্জি কেমন?’ আমি বললাম, ‘খুব একটা ভালো লাগে না।’ সঙ্গে সঙ্গে আমির ফোন তুলে বললেন, ‘হ্যালো রানি, আমার সেটে একজন অভিনেতা আছে, যার তোমাকে ভালো লাগে না!’ এটা শুনেই আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই!’
আসলে থ্রি ইডিয়টস কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি দর্শকদের আবেগ। ছবির চরিত্র এবং দৃশ্যগুলি আজও দর্শকদের মনে সতেজ। রাহুলের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকেও বোঝা যায়, সিনেমাটির ব্যাকস্টেজও কত রঙিন ছিল, কত মজা করে কাজ হতো।