মাহিদুল ইসলাম হিমেল
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আঞ্চলিক গানের কন্ঠ শিল্পী শোভা খান। এক সময় চট্টগ্রাম বেতার থেকে পরিবেশিত তার সুরেলা কন্ঠের আঞ্চলিক গান নোয়াখালী অঞ্চলে তথা সারা দেশে ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তীতে ঢাকা বেতারে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ঢাকা বেতার থেকে শিল্পীর কন্ঠে বিভিন্ন ধরণের গান পরিবেশিত হলে শ্রোতাদের হৃদয়ে ভীষণ আলোড়িত করে।
সময়ের স্রোতে বয়সের ভারে আজ অনেকের কাছে অপরিচিত হয়ে গেছেন। নিজ পরিবারের কাছে ঘৃনিত শোভা খানের দিন কাটছে চরম অবহেলায় অযত্নে। জীবনের শেষ সময়ে এসে নিজ গৃহে স্থান হয়নি, থাকেন ভাইয়ের ঘরে পরবাস।
শোভা খানের জন্ম ১৯৪৫ সালে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের সৈয়দ মিয়া খান সাহেব পরিবারে। ছোট কালে মায়ের অনুপ্রেরণায় গান গাওয়া শুরু করেন। পরে চট্টগ্রাম বেতারে গানের শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময়ে হাতিয়া দ্বীপে ও জেলা সদরে শোভা খানের দারুন জনপ্রিয়তা ছিল। উনার নিজেরই গান রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক।
সময়ের কাল স্রোতে বয়সের ভারে শোভা খান আজ অনেকের কাছে অপরিচিত হয়ে গেছেন। প্রভাবশালী সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের সুললিত কন্ঠে এখন আর গান বাজে না। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের মাঝে বেশী প্রভাবিত হওয়ায় মাটি ও মানুষের অনুভূতি সম্পন্ন গান আর রচিত হয় না বলেই অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক গানও। ফলে দিন দিন শিল্পীর কদরও কমতে থাকে। এদিকে শিল্পীর ধুমপান করা সহ কিছু কাজ পরিবারের কাছে পছন্দ হয়ে উঠে। ফলে নিজের ঘরে শোভা খান হয়ে উঠে অনেকটা অবহেলিত। অগত্যায় শিল্পী শোভা খানকে অন্যের ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে। জীবন সায়াহ্নে শিল্পী শোভা এখন একাকী জীবন যাপন করছেন। কেউ দিলে তার খাওয়া হয় না হয় খাকতে হয় উপভাস।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিয়া পৌরসভার ৭ নং ওয়াডের ছৈয়দিয়া বাজারের পাশে শোভা খানের আধুনিক ও রুচিসম্মত ঘরবাড়ী আছে। তাতে স্ত্রী, ছেলে ও ছেলে বৌ সহ নাতি নাতিনরা বসবাস করেন। কিন্তু সেই ঘরে শোভা খানের থাকার জায়গা হয়নি। তার ঔরসজাত সন্তানেরা আজ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে পিতার কোন সমাদর হচ্ছেনা। এমনকি বাবার প্রতি যে সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেটাও আজ এই শিল্পীর কপালে জুটছে না।
শিল্পী শোভা খানের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন গান করা ছেড়ে দিয়েছি। মৃত্যুর ভয় চলে এসেছে। প্রায় ১০ বছর ধরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়ি। ব্যক্তিগত বদ অভ্যাসের কারণে পরিবারের লোকজনের কাছে আমার গুরুত্ব এখন আর নাই। তারা তাদের মত আছে আমার কোন খোঁজ খবর নেয় না, তাই ছোট ভাইয়ের ঘরে আমার মত করে আছি। পাশের এক ভাইয়ের ছেলের ঘর থেকে প্রতিদিন পাঠানো খাওয়ার খেয়ে দিন কাটে।