নীতিমালা ছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের বৈধতা দেওয়া হলে ঢাকা শহরে এ ধরনের যান দ্বিগুণ হবে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে সড়কে বিশৃঙ্খলা কিংবা দুর্ঘটনা। তাই ব্যাটারিচালিত যান বৈধতা দেওয়ার আগে নীতিমালা করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
যন্ত্রের সাহায্যে চলে এমন যানবাহনের অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে যানবাহনের মর্যাদা দেয়নি বিআরটিএ। এসব যানের কোনো নীতিমালা ও নিবন্ধন নেই। চালকদেরও নেই কোনো আইনি সুরক্ষা। আবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিধিমালায় ব্যাটারিচালিত যানের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তাই এখন পর্যন্ত এসব যান অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা কোন সড়কে চলবে তার নীতিমালা করে দেওয়া উচিত। মূল সড়কে যেখানে বাস ও ভারী গাড়ি চলাচল করছে সেখানে কোনোভাবেই এসব অটোরিকশা চলতে দেওয়া উচিত নয়। এতে দুর্ঘটনা ঝুঁকি বাড়বে।’
আমাদের ঢাকা শহরে মাত্র আড়াই শতাংশ সড়ক বাস চলাচলের জন্য উপযোগী। অন্য সড়কে বাস প্রবেশ করতে পারে না। শাখা সড়ক কিংবা অলিগলি যেখানে বাস প্রবেশ করতে পারে না সেসব সড়কে অটোরিকশা চলাচল করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত যান বা রিকশার কাঠামোগত কিছু দুর্বলতা আছে। তবে এটা যে আরও ইম্প্রুভ করার সুযোগ নেই তাতো নয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা রোধে এর ব্রেকিং সিস্টেম, ফ্রন্টডোর, ব্যাকডোর থেকে শুরু করে সবকিছু উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। এ গাড়িগুলোর মূল সমস্যা ব্যাটারির সঙ্গে মোটর যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, ব্রেক চাপলেও মোটর ঘুরতে থাকে। একটা ছোট্ট প্রযুক্তি রয়েছে, যা বসিয়ে দিলে ব্রেক করলে মোটরও বন্ধ হয়ে যাবে। তার মানে এ ধরনের যানবাহন নিরাপদ করার সুযোগ আছে।
গত ১৫ মে ঢাকার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকায় ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি তিনি। কমিটিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, সরকারের আটটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঢাকার দুই মেয়র ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপরই তা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে।
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের এমন সিদ্ধান্তের পর গত রোববার (১৯ মে) ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রতিবাদে রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। ওইদিন তারা কালশী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দেন। ভাঙচুর করেন অন্তত ১০টি যানবাহন। পুলিশও কাঁদানেগ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরদিন সোমবার (২০ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ব্যাটারি-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। তারা সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের বিজয় সমাবেশ
সরকার ঢাকা শহরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিজয় সমাবেশ’ করেন চালকরা। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তারা। এছাড়া যানবাহন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।