পর্দা করে ক্লাস করা এবং পরীক্ষা দেওয়ায় হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে। আইন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী নিপা আক্তার পর্দা করায় নিজের সঙ্গে ঘটা হেনস্তার অভিযোগ তুলেন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পর্দা নিয়ে হেনস্তা করায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে ও নিজের টাইমলাইনে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক হেনস্থা করেছেন। শুরুতে বলে রাখি, ভার্সিটির প্রথমদিকে আমি শুধু হিজাব পরতাম। পরে আল্লাহ হেদায়েত দেন। আমি নেকাব পরা শুরু করি। তারপর একদিন আমি তার কাছে গিয়েছিলাম আমার হলের সিটের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু তিনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক কথা শোনান। আমার এই অবস্থা কেন? আমার বিয়ে হয়েছে কি না? আমাকে কিন্তু এভাবে কোর্টে অ্যালাও করবে না। এভাবে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনান।’

আরও অভিযোগ করে ওই ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি পরীক্ষার হলে যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তখন তিনি আমাকে অনেক অপমান করেন। তোমার প্রবেশপত্রে যে ছবি দেখা যাচ্ছে এখন লজ্জা করে না? মুখ খুলতে কীসের লজ্জা। আরও অনেক কথা বলে আমাকে অনেক অপমান করেন। এবং তিনি আমার খাতায় সাইনও করতে চাননি।’

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি বিএমএস বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বিন খলিল বলেন, ‘পরীক্ষার হলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া একটি মেয়েকে পর্দা করায় নাম জিজ্ঞেস করে বলে, এভাবে আমি সাইন দেব না। তুমি নেকাব না খুললে আমি কীভাবে বুঝব তুমি আমার বিভাগের মেয়ে। পরবর্তীতে এ নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাদশা মিয়া আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য করে।’

মানববন্ধনে ভুক্তোভোগী ছাত্রীর সহপাঠী এবং বান্ধবী অর্পিতা দাস বলেন, নিপার সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বাদশা স্যার অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। সে পর্দা করতে শুরু করে তাই এমনটি করতেন তিনি। পরীক্ষার হলে এবং ভাইবা বোর্ডেও সে ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতো। কিন্তু বাদশা স্যার তার সেখানে তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিতো শুধু পর্দা করার কারণেই।

২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নৌরিই ত্বহা বলেন, পর্দা করা মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার। সেখানে হস্তক্ষেপ করা বা তা নিয়ে হেনস্তা করার অধিকার কারও নেই। আজকে আমরা আমাদের সিনিয়র আপুর পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেন, পরীক্ষার হলে নেকাব পরায় তাকে চিনতে পারছিলাম না তাই তাকে শুধুমাত্র নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম। নাম জিজ্ঞেস করা তো অপরাধের কিছু না।

উল্লেখ্য, এর আগেও নোবিপ্রবির আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফয়েজ নামে শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের ৩ বছর ধ্বংস করে দেওয়া এবং মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণের অভিযোগ উঠে নোবিপ্রবির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *