জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বরে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করাও।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই’, ‘রাষ্ট্র তুমি আদিবাসী মরলে কি শান্তি পাও?’, ‘সেটেলার হামলা করে প্রশাসন চুপ কেন?’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী বলার আগে রাষ্ট্রের কাঠামোতে সম্পৃক্ত করুন’, ‘আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আদিবাসীদের সাথে বৈষম্য কেন?’, ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে অবস্থান করে।
এসময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ক্লোরিন চাকমা বলেন, ‘১৫ই জানুয়ারি আদিবাসীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এমন একটা রাষ্ট্রে বসবাস করি যেখানে ধর্মের নামে আধিপত্য বিস্তার করা হয়, জাতির নামে আধিপত্য বিস্তার করা হয়। ‘স্টুডেন্টস ফর সভেরেনটি’ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হোক। যারা স্টাম্পের সাথে জাতীয় পতাকা বেঁধে আমার ভাইদের ওপর হামলা করেছে। যারা এধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে তারা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না।’
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুইচিং মারমা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সম্মান সূচক এনসিটিবি কর্তৃক বাংলা বইয়ে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। কিন্তু একটি সংগঠন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ এর অভিযোগে এটি বাতিল করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আদবাসী শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে পৌছালে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি সংগঠন তাদের ওপর হামলা চালায়। যা আপনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছেন। আমরা কোন ভাষায় কথা বলব, কোন পরিচয় বাঁচবো, সেটা কেন অন্য কেউ ঠিক করে দেবে। আমাদের কেন উপজাতি বলা হবে? আমি চাকমা, আমি মারমা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় দিতে হবে। ধর্মের নামে বৈষম্য করা হয়। গতকালের সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন নিজেদের আদিবাসী দাবি করছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পাবেল রানা বলেন, ‘আমরা যারা এখানে দাঁড়িয়েছি তারা প্রত্যেকেই মানুষ। কিন্তু এই মানুষদের ওপর গতকাল এনসিটিবি ভবনের সামনে যে হামলা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানায় এবং আমরা চাই যারা এই হামলার সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। শুধু দুইজনকে গ্রেফতার করলে হবে না, চব্বিশ পরবর্তী এই দেশকে যারা উত্তপ্ত করার মহড়ায় মেতে উঠেছে তাদেরকে এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে থাকবে না। সরকারের কাছে দাবি জানায়, এই হামলার সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
উল্লেখ্য, পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখাকে কেন্দ্র করে গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ এবং ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’- এই দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে আহত হন। হামলার ঘটনা এখন পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার ২ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।