অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যে বার্তা দিয়েছেন তার প্রয়োজন ছিল। মানুষের মনের মধ্যে যেসব প্রশ্ন উঠছে তিনি তার সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। কর্তৃত্ববাদের ধ্বংসযজ্ঞের উত্তরণ ঘটিয়ে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত দেশ গড়ার যে স্বপ্ন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট ও শক্ত অবস্থানকেও স্বাগত জানিয়েছেন তারা। বিশেষ করে উপদেষ্টাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে তা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে বলেও মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নিঃসন্দেহে স্বাগত জানানোর মতো। প্রথমত, গত সরকার দেশের যে সমস্যাগুলো তৈরি করে গেছে তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে এসব সমস্যার সমাধান যে একদিনে সম্ভব নয়, সেই বাস্তবসম্মত কথাও বলেছেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনেক কিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত। এছাড়া উনারা কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন সে বিষয়েও বলেছেন, জনগণ যতদিন চাইবেন ততদিন। ফলে প্রত্যেকটা কথাই কিন্তু প্রত্যাশিত এবং ভালো কথা। ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূসের) প্রথম ভাষণে এটাই প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) যে বক্তব্য দিয়েছেন এগুলোর প্রয়োজন ছিল। মানুষের মধ্যে যেসব প্রশ্ন ছিল তিনি তার সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। সংকটময় কর্তৃত্ববাদের যে ধ্বংসযজ্ঞ, তার উত্তরণ ঘটিয়ে আমাদের ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত যে দেশ গড়ার স্বপ্ন তার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে দাবিগুলো তা অবশ্যই যৌক্তিক, কারণ অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচিত সরকারের হাতেই চূড়ান্ত বিবেচনায় ক্ষমতা হস্তান্তরই জনগণের প্রত্যাশা, সেটাও তিনি বলেছেন।
তবে এই প্রেক্ষিতে আমি মনে করি-এখানে তাড়াহুড়া করার সময় যে এখনই আসেনি সেটাও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তিনি খুবই ইতিবাচক ও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি প্রাথমিক কিছু দৃষ্টান্তও স্থাপনের কথা বলেছেন। বিশেষ করে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেখানে প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের ভাষণ খুবই দরকার ছিল। তার ভাষণে সমসাময়িক অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। এখন সরকারের উচিত একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করা। তারা কী কী ধরনের সংস্কার করবেন, তা ওই রোডম্যাপে প্রকাশ করা উচিত। একই সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা বা সংলাপ করা প্রয়োজন।