বড় উদ্যোক্তাদের বা বড় শিল্প গ্রুপের নামে নতুন ঋণ বিতরণ বা আগের ঋণের সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্র“পের বা কোম্পানির দায়দেনা সম্পর্কে আগে করা অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন ঋণ নেওয়া যাবে বা ঋণের সীমা বাড়ানো যাবে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলোও নবায়ন করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে গ্রুপ বা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ঋণ ঝুঁকির প্রতিবেদনের রেটিং নতুন করে করতে হবে না। গ্রুপ বা কোম্পানিগুলো ২০১৯ বা ২০২০ সালের যে কোনো একটি বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে ওইসব সুবিধা নিতে পারবে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বড় শিল্প গ্রুপ বা কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ, আগের নেওয়া ঋণ সীমা বাড়ানো বা কোনো খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো নবায়ন করতে গ্রুপ বা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ঋণ ঝুঁকির রেটিং তৈরি করে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। এসব তৈরি করতে হতো অডিট ফার্মের মাধ্যমে। এই রেটিংয়ে কোম্পানি বা গ্রুপগুলোকে ভালো রেটিং পেতে হতো। সর্বনিম্ন ৫৫ শতাংশের বেশি থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি রেটিং পেলেই শুধু তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হতো। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি পেলে অতি উত্তম, ৬৫ শতাংশের বেশি থেকে ৭৫ শতাংশের কম পেলে ভালো এবং ৫৫ শতাংশের বেশি থেকে ৬৫ শতাংশের কম পেলে প্রান্তিক পর্যায়ে শ্রেণি বিভক্ত করা হতো। এসব গ্রাহক শুধু নতুন ঋণ বা আগের ঋণ সুবিধার সীমা বাড়াতে পারতেন। একই সঙ্গে তারা খেলাপি ঋণও নবায়ন করতে পারতেন। ৫৫ শতাংশের কম রেটিং পেলে তাদের অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ফেলা হতো। তারা ওইসব সুবিধা পেতেন না। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কমাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ওই নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নীতিমালাটি জারি করা হয়। কিন্তু এই নীতিমালার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি করা হয়। ফলে এর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ ও ২০২২ সালে বৈশ্বিক মন্দার পুরো সময়ে এ নীতিমালাটি কার্যকর করা হয়নি। এ নীতিমালা শিথিলের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। তিন কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়িয়েছে। ফলে ৩০ জুন পর্যন্ত শিথিলের আওতায় নতুন ঋণ নিতে পারবেন, আগের নেওয়া ঋণ সীমা বাড়াতে পারবেন এবং কোনো খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো নবায়ন করতে পারবেন।
সার্কুলারে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ও বৈশ্বিক মন্দার সময় থেকেই এ নীতিমালা বহাল রয়েছে। নীতিমালার আওতায় দেশব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য ও সার্বিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা প্রদানসহ বিদ্যমান ঋণ নবায়ন অব্যাহত রাখার এই সীমা বাড়ানো হলো।