বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা। আগের পাঁচ বিসিএসে নারীদের নিয়োগের হার ছিল এক-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৫-২৬ শতাংশের ঘরে। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে তা নেমেছে ২০ শতাংশেরও নিচে। সর্বশেষ ৬টি সাধারণ বিসিএসের গড় হিসাবে প্রতি ১০০ ক্যাডার পদের ৭৫টিতেই নিয়োগ পেয়েছেন পুরুষরা। নারীদের ক্যাডার পদে নিয়োগের হার মাত্র ২৫ শতাংশ।
অথচ দেশের উচ্চশিক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় সমান। অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলেও এগিয়ে ছাত্রীরাই। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষা শেষে ছাত্রীদের চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাদের অভিমত অবশ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় নারী শিক্ষার্থীরা ভালো করলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নানান কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক চিত্র একই। এছাড়া নারী কোটা বাতিলের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও সর্বশেষ বিসিএসে পড়তে পারে বলে ধারণা তাদের।
পিএসসি প্রকাশিত ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৪২১ জন। বাকি এক হাজার ৭৪২ জনই পুরুষ। শতাংশের হিসাবে নারীদের এ বিসিএসে নিয়োগের হার মাত্র ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে পুরুষের নিয়োগের হার ৮০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এই বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগ পওয়া প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৮১ জনই পুরুষ।
এর আগে ২০১৭ সালে ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এরমধ্যে নারী ক্যাডার ছিলেন ৬০৯ জন, যা মোট নিয়োগপ্রাপ্তদের ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ। বাকি ৭৩ দশমিক ৭৮ শতাংশই পুরুষ প্রার্থী। পরের বছর ৩৭তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় এক হাজার ৩১৪ জনকে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩২৩ জন নারী, শতাংশের হিসাবে যা ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
২০২০ সালে ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ২ হাজার ২০৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এরমধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৫৯৩ জন, শতাংশের হিসাবে যা ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৪০তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া এক হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে নারী ৫১১ জন। এছাড়া এক হাজার ৪৫২ জন পুরুষ।
৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ হয় ২০২৩ সালে। এতে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ২ হাজার ৫১৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৭২ জন নারী এবং এক হাজার ৮৪৪ জন পুরুষ। শতাংশের হিসাবে নারী ২৬ দশমিক ৭১ এবং পুরুষ ৭৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।
৬ বিসিএসে গড়ে ১০০ ক্যাডারে ৭৫ জনই পুরুষ
২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয়টি সাধারণ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএস। এতে মোট নিয়োগ পেয়েছেন ১২ হাজার ৪৮৩ জন, যার মধ্যে নারী ৩ হাজার ১২৯ জন। বাকি ৯ হাজার ৩৫৪ জনই পুরুষ।
পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি সাধারণ বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে নারী ২৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বাকি প্রায় ৭৫ শতাংশই পুরুষ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ ক্যাডারের ৭৫ জন পুরুষ এবং নারী ২৫ জন।
উচ্চশিক্ষায় ছাত্রীদের উপস্থিতি কেমন?
দেশে উচ্চশিক্ষায় এগিয়েছেন নারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীর পার্থক্য কমে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায়ও ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এমনকি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়ও ছাত্রীদের ফলাফল ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৬৩টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায় ও তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার। এরমধ্যে ছাত্র ২৫ লাখ ৪২ হাজার এবং ছাত্রী ২২ লাখ ১৪ হাজার। সে হিসাবে মোট শিক্ষার্থীর ৪৮ শতাংশ ছাত্রী এবং ৫২ শতাংশ ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফলে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী। তারা পড়াশোনায় মনোযোগী ও ভালো ক্যারিয়ার গড়ার প্রত্যাশী। বিভাগের শিক্ষকরাও জানান, ছাত্রীদের আগ্রহের কারণে বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষায় তাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।