এবার গুমের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুমের দুটি মামলায় প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন।
মামলার অন্য আসামির মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য সংঘবদ্ধ অপরাধ করেছে। এ জন্য আজ একটি মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলাম। এদের মধ্যে জিয়াউল আহসান অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় হাজির করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন আসামিদের গ্রেপ্তার করে হাজির এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে এ সময় মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলামসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাই-আগস্ট ‘গণহত্যার’ অভিযোগে এক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অন্তত দুটি গুমের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল যে অস্ত্রের মাধ্যমে, তা হলো গুম, ক্রসফায়ার। সাদা পোশাকধারী, পোশাকধারী বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যেত। তাদের অধিকাংশই ফিরে আসত না।
তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর গোপন কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন, হত্যা করা হয়েছে। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। সে অপরাধটা সংঘটিত হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে, পরিকল্পনায়।’ তিনি বলেন, ‘এই বিচারের প্রাথমিক কাজটা শুরু করেছি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ও তদন্তের স্বার্থে সব আসামির নাম প্রকাশ করছি না।’