কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা- ২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে ক্রীড়া সপ্তাহ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারী ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে হলের টিভি রুমে এ পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদা বেগম, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের হাউজ টিউটর মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ আল-আমিন, নবাব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আফরিন সানিসহ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন— ব্যাডমিন্টন এককে বিজয়ী হয়েছেন হেমায়েত ও রানার্সআপ হয়েছেন রায়হান; ব্যাডমিন্টন দ্বৈত বিজয়ী হেমায়েত, ফারদিন ও রানার্সআপ হয়েছেন শাহানুর, তৌহিদ; টেবিল টেনিস একেক বিজয়ী হয়েছেন শাহানুর ও রানার্সআপ হয়েছেন মিলন; টেবিল টেনিস দ্বৈত বিজয়ী হয়েছেন জয়, মিলন ও রানার্সআপ হয়েছেন শাহানুর, আজহার; দাবা বিজয়ী বাসেদ ও রানার্সআপ পৃথু; ক্যারম একক বিজয়ী সোহেল ও রানার্সআপ হারিস; ক্যারম দ্বৈত বিজয়ী মাহফুজ, নুর ও রানার্সআপ শরিফ, শফিউল্লাহ; ফুস বল বিজয়ী শাহাদাত ও রানার্সআপ মাহফুজ; লুডু বিজয়ী শরিফ ও রানার্সআপ জুবায়ের; কার্ড দ্বৈত বিজয়ী মারুফ, সাইফ ও রানার্সআপ সোহেল, শিহাব।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে হলের ছাত্রদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা, হলের কর্ণারে সিড়ি তৈরি, হলের সম্মুখে মোড়ল ও বাগান।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘একটা ছাত্রের ক্যাম্পাসে দুইটা পরিচয় থাকে। একটা তার ডিপার্টমেন্ট আরেকটা হচ্ছে হল। হলের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন থাকা খুবই দরকার। আমার অনুরোধ থাকবে তোমরা একটা অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন করো। আজকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের স্পোর্টস উইকের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হচ্ছে। সামনে আমাদের পরিকল্পনা আছে আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করার। এতে করে বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আজকে তাদের হলের বিভিন্ন দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেছে। আমরা চেষ্টা করব হলের সীমাবদ্ধতাগুলো যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনার।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত বোধ করছি এবং সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমি জানি এই হলের নাম যার নামে করা হয়েছে তিনি ভাষা আন্দোলনের সৈনিক আমাদের এই বৃহত্তর কুমিল্লাকে যিনি সারা দেশে পরিচিত করেছেন জনাব শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই মাস ভাষার মাস তাই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথকে। তবে একটা জিনিস খারাপ লাগার বিষয় যে তৎকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কাজগুলো শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা এবং হলের যে ধারণা সেটা হতে পারেনি। সেটি আমাদের একটি আক্ষেপ ছিল কিন্ত তখন আমাদের কোনো ভুমিকা ছিল না সরকারি কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্য হলগুলোর যে সুবিধা থাকা দরকার সেই সুবিধাগুলোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকটি বিষয় সুন্দরভাবে পালন করে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ফ্যাসিবাদের আমলে হলে অনধিকার চর্চা হতো শিক্ষকদের সম্মান দেওয়া হতো না। কিন্তু সেই অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে বিশেষ করে তার অন্যতম একটি লক্ষণ হলো ডাইনিং এ মিল সংখ্যা বেড়েছে তার মানে হলের ব্যবস্থাপনা ও অনান্য বিষয়ের উন্নতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি হল প্রভোস্টকে অনুরোধ করব আপনারা হলে যে সমস্যাগুলো তা বেশি প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সমাধান করুন। আর আমরা সবাই যদি একটু সহযোগিতামুলক আচরণ করি তাহলে তা সমাধান অনেক সহজ হবে।’
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই হলের প্রভোস্ট হিসেবে আছি। আমি বলতে চাই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কখনো সফলভাবে কোনো কাজ করতে পারেনা যদি তার টিম সুন্দর না হয় বা তার টিম তাকে সাহায্য না করে। আমি আমার হলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে শুরু করে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যাদের সহযোগিতায় শুধু এই অনুষ্ঠান না প্রায় সব কাজ আমরা সফলভাবে করতে পারি। আমরা আসলে শুরু থেকে চেষ্টা করেছি হলের অবকাঠামো না, হলের যেসব কর্মী আছে এবং যেসব শিক্ষার্থী আছে তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী আসার পর যে নার্সিং এর দরকার হয়, যে পরিবেশটার দরকার হয় বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সে সুযোগ সুবিধা দিতে পারে না তবে যেটা পারে সেটা হলো শিক্ষার্থীদের সুন্দর মন–মানসিকতায় পরিবর্তন করে দিতে। আমি আসলে যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছে এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানায় সেই সাথে ধন্যবাদ জানায় আমার হলের সকল কর্মকর্তাদের এ পুরো সপ্তাহ এতো সুন্দরভাবে কাজ করেছে। আমি আসলে চেয়েছি শিক্ষার্থীরা যাতে এসব কাজ ব্যস্ত থাকে এবং এর মাধ্যমে মাদক ও নানা অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকে।’