মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। ফলে এতে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক গাড়ি চলাচল করেনি। সমীক্ষা অনুযায়ী, দৈনিক ৮১ হাজার ৪৭১ গাড়ি চলার কথা। সেখানে প্রথম দিন (সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) গাড়ি চলেছে ৩ হাজার ৪৬২, যা সমীক্ষার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্ট অ্যান্ড কনসালটেশনের করা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২০২৫ সালে সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮১ হাজার ৪৭১টি গাড়ি চলাচল করার কথা। এর মধ্যে রিকশা ১৪ হাজার ৩৫৮টি, মোটরসাইকেল ৫ হাজার ৮১৪টি, ঠেলাগাড়ি ৫৯০টি, কার ও তিন চাকার যানবাহন ৩৯ হাজার ৪২৮টি, মাইক্রোবাস, ভ্যান, জিপ ৬ হাজার ৫১৩টি, মিনিবাস ও পিকআপ ৫ হাজার ৩৮টি, বাস ৩ হাজার ৩৮৯টি, ট্রাক ৫ হাজার ৬৬৪টি এবং লরি ও ট্রেলার ৬৭৭টি।

কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে শুধু ১০ ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনিবাস, বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।

ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া বাস, টেম্পোর মতো গণপরিবহন ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে টানা চলাচল করা কঠিন। চলাচলের সুযোগ না রাখায় সম্ভাব্য সমীক্ষা অনুযায়ী, দৈনিক চলাচলরত প্রায় ২১ হাজার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৬। এর মধ্যে মোটরসাইকেল রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার, যা নিবন্ধিত যানবাহনের প্রায় ৬০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৮ সালে করা চিটাগং স্ট্র্যাটেজিক আরবান ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যানের জরিপ অনুযায়ী, নগরের সড়কের ৫৭ শতাংশ দখলে থাকে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, টেম্পো ও হিউম্যান হলারের। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ সড়ক দখলে থাকে অটোরিকশা ও রিকশার। বিআরটিএর নিবন্ধন অনুযায়ী, নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ৩৪ হাজার ৮৪২টি। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরে রিকশার সংখ্যা দুই লাখের বেশি।

এ বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘প্রকল্প যখন নেওয়া হচ্ছে, তখন থেকে বলে আসছি, এতে গণপরিবহন চলাচল করবে না। সিংহভাগ যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করে। সবাইতো আর প্রতিদিন পতেঙ্গা আর বিমানবন্দর যাতায়াত করবে না। যদি মোটরসাইকেল যাতায়াত করতে না দেয়, তাহলে কার্যকর থাকবে না।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিডিএর হিসাব অনুযায়ী এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ হাজার যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করে। এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণাধীন ৯টি র‌্যাম্প চালু হলে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা আরও বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল চালকরা গতিসীমা মানতে চান না। দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রেখেছে। গতি নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি বসানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হলে, তখন মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়া যায় কিনা, ভাবা হবে।’

তবে চট্টগ্রাম বাইকার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমাম হাসান রিংকু বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলতে না দিলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। পাশাপাশি এটির নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে না। কারণ নগরে চলাচলরত যানবাহনের অধিকাংশ মোটরসাইকেল। তা ছাড়া এখন যে গাড়িগুলো চলছে, সেগুলো কি গতিসীমা মানছে? যিনি নিচে গতিসীমা লঙ্ঘন করবেন, তিনি উপরেও করবেন। সুতরাং সড়কে দুই ধরনের আইন হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে।

তারা সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া আইন প্রয়োগেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। ব্যথা হচ্ছে বলে তো মাথা কেটে ফেলা যায় না। সড়কে অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে। এ জন্য সড়কেও কি যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে?’

টোল আদায় শুরু
পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরুর পাঁচ মাস পর টোল আদায় শুরু করেছে সিডিএ। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে টোল আদায় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম টোল দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এর পর সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমও টোল দিয়ে পার হন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৬২টি গাড়ি থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৩০ টাকা ও কার ৮০ টাকা। জিপ ও মাইক্রোবাসের টোল ১০০ টাকা। পিকআপ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫০ টাকা। মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) থেকে ২০০ টাকা করে, বাস থেকে ২৮০ টাকা নেওয়া হয়েছে। ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *