শেরপুরে আটক মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯ হাজার সরকারি বই কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন। প্রাথমিক তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপের অস্তিত্ব পেয়েছেন তদন্ত কমিটি। উদ্ধার হওয়া বইয়ের চেয়ে গোডাউনে বই ঘাটতির পরিমাণ দ্বিগুণ বলে নিশ্চিত হয়েছেন উপজেলা প্রশাসনসহ শিক্ষা বিভাগের গঠিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রাতে শেরপুর সদর উপজেলায় ট্রাকভর্তি বই জব্দ করে পুলিশ। সেখানে ২০২৫ সালে সরকারিভাবে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত মাধ্যমিক পর্যায়ের অষ্টম, নবম ও ১০ম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের ৯ হাজার বই রয়েছে। এসব বই কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায় , তদন্তে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউনে বই ঘাটতির প্রমাণ মিলেছে। তবে ঘাটতির পরিমাণ উদ্ধার হওয়া বইয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
সূত্র মতে, গোডাউনে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই ঘাটতি রয়েছে ১৭ হাজার ৫৩৩টি। এর মধ্যে শেরপুর ৯ হাজার ৬৭০টি বই উদ্ধার হয়েছে। অবশিষ্ট ৭ হাজার ৮৬৩টি বইয়ের কোনো হদিস এখনো মেলেনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, একই গোডাউনে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, ইসলাম শিক্ষা এবং হিন্দুধর্ম শিক্ষা বিষয়ের মোট ৮ হাজার ৫৬১টি বই মজুত রয়েছে। তবে তার কোনো চালান কপি নেই। বইগুলো কীভাবে গোডাউনে আসলো সে বিষয়ে গোডাউনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও অফিস সহায়ক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রৌমারীতে ২০২৫ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ গেয়েছে ৬৬ হাজার ৭৫০টি বই। এর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪১ হাজার ৭৮১টি বই বিতরণ করা হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী গোডাউনে আরও ২৪ হাজার ৭৬৭টি বইয়ের বিপরীতে
৭ হাজার ৪৩৬টি বই পেয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসের গোডাউনে রাখা বই সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোক্তার হোসেন, অফিস সহকারী আখেরুল ইসলাম এবং নৈশপ্রহরী জামাল উদ্দিন। প্রাথমিক তদন্তে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে ডিইও বলেন, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। একাডেমিক সুপারভাইজার এবং অফিস সহকারী দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বই পাচারের ঘটনায় আরও কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *