ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত হতে থাকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে বাংলার আকাশ-বাতাস-সর্বত্র। বিজয়ের সেই বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরও দুর্বার। হানাদার বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে বাংলার দামাল ছেলেরা হয়ে উঠেন আরও অপ্রতিরোধ্য। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়।

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর, দিনটি ছিল শনিবার। এই দিন বাংলাদেশের সব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় হানাদার বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে লক্ষ্মীপুর হানাদারমুক্ত হয়। যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর ছিল বিপর্যস্ত। ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগর বিমানবন্দর এবং আখাউড়া রেলস্টেশন দখল করেন। ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর।

এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিজেদের আয়ত্তে আনেন। এদিন অদম্য মুক্তিসেনারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, দামুড়হুদা, জীবননগর, বকশীগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা শত্রুদের কবল থেকে দখলমুক্ত করেন।

অন্যদিকে যৌথ বাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানিরা পিছু হটতে শুরু করে। এদিন থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে। সেগুলো হলো পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত চতুর্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে। উত্তরাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে। পশ্চিমাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত দ্বিতীয় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে এবং মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আরেকটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে অভিযান শুরু করে।

একের পর এক পাকিস্তানি ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানিরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড়ো করেছিল, যৌথ বাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ভারতীয় বিমান এবং নৌবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বারবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনা প্রভৃতি এলাকায় সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। ঢাকায় চলে জোর বিমানযুদ্ধ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *