সাংবাদিকদের কাজের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই তালিকায় নাম রয়েছে পাকিস্তানেরও। তবে এ বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।
২০২৪ রাউন্ড আপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তালিকায় সবচেয়ে বিপজ্জনক বিবেচনায় যেসব দেশের নাম রয়েছে-ফিলিস্তিন (১৬ সাংবাদিক নিহত), পাকিস্তান (সাতজন), বাংলাদেশ (পাঁচজন), মেক্সিকো (পাঁচজন), সুদান (চারজন), মিয়ানমার (তিনজন), কলম্বিয়া (দুজন), ইউক্রেন (দুজন), লেবানন (দুজন)।
এতে জানানো হয়, এ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রেকর্ড ৫৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে যুদ্ধ বা সহিংসতা চলছে এমন এলাকায়। বিশেষ করে ইরাক, সুদান, মিয়ানমার, ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধক্ষেত্রও রয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ রকম এলাকায় সাংবাদিকদের নিহতের সংখ্যা এবারই সর্বোচ্চ (৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ)। আরএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল তিবো ব্রুটিয়েন বলেন, ‘এই সাংবাদিকরা মারা যাননি, তাদের হত্যা করা হয়েছে। যারা বন্দি, তাদের ক্ষমতাসীনরা আটকে রেখেছে। যারা নিখোঁজ, তাদের অপহরণ করা হয়েছে। এসব অপরাধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটেছে বিভিন্ন সরকার বা পুরোপুরি দায়মুক্তি পাওয়া সশস্ত্র বাহিনীগুলোর হাতে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’
মানুষকে তথ্য দেওয়ার জন্য যারা কাজ করছে তাদের ওপর হামলা-সহিংসতা ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চল ছিল গাজা। বিশ্বে এ বছর যত সাংবাদিককে দায়িত্ব পালনের সময় হত্যা করা হয়েছে তার ৩০ শতাংশই ঘটেছে গাজায়, আর তাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ পাকিস্তান। এ বছর সেখানে সাতজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এর পরই আছে বাংলাদেশের নাম, যেখানে হত্যা করা হয়েছে পাঁচজন সাংবাদিককে।
আরএসএফের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারা বিশ্বে এখন ৫৫ জন সাংবাদিক জিম্মি অবস্থায় আছেন। তাদের ২৫ জনই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে আটক। সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭০ শতাংশ জিম্মি আছেন সিরিয়ায়। এ বছর দুজন সাংবাদিককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এবং দুটি ঘটনাই ঘটেছে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের হাতে। এছাড়া ৩৪টি দেশের প্রায় ১০০ জন সাংবাদিক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে কারাবন্দি আছেন ৫৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক। গত বছরের তুলনায় এবার এই হার প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে। যে তিন দেশে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক কারাবন্দি সেগুলো হচ্ছে চীন (১২৪ জন), মিয়ানমার (৬১ জন) ও ইসরাইল (৪১ জন)।
বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ : আরএসএফের বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমেই অবনতি হতে দেখা যাচ্ছে। ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। আগের বছর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৬৩তম।
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন মাসে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে।