সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে তৈরি হচ্ছে। ভূমিকম্প ও খরার ক্ষেত্রে রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান। এছাড়া বন্যা ও আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রে নিম্ন ঝুঁকি এবং নদী ভাঙনের ক্ষেত্রে অতি নিম্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আঞ্চলিক পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়নে (রোসা) এসব বিষয় উঠে এসছে। বুধবার রোসার খসড়া নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারে বিভিন্ন ঝুঁকির পাশাপাশি ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২০০টি কর্মশালার মাধ্যমে এসব সুপারিশ নির্ধারিত করা হয়।

কর্মশালায় জানানো হয়, ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ১০৪ জন উদ্যোক্তাকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। কিন্তু এত বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে এর সামাজিক, পরিবেশ ও অন্যান্য প্রভাব কী হবে তা নিয়েই মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ অর্থনৈাতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বক্তব্য দেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএসএম হুমায়ুন কবীর। আলোচক ছিলেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক এম মাহমুদ আলী, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুরুল বাশির, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খাতুন, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন। সঞ্চালনা করেন বেজার নির্বাহী সদস্য সালেহ আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোসা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরামর্শক টিম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, প্রকল্পের বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি সামগ্রিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবেশগত এবং সামাজিক উপাদানগুলো হলো, ভূমির ব্যবহার, গ্যাস সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিপজ্জনক ও অবিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশন, বর্জ্য পানির প্রাক শোধন, চিকিৎসা, শিল্পের ধরন, উন্নয়নের পর্যায়ক্রমসহ বিভিন্ন বিকল্প অন্বেষণ করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, পরিবেশকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের চিন্তা করা যাবে না। এখানে বায়ু, পানি, শব্দ নিয়ন্ত্রণসহ সব বিষয়কেই গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক সময় বড় বড় প্রকল্প করা হলেও তার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এ ক্ষেত্রে যেন সেটি না হয়। সরকারি সব সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি যখন হবে তখন সেখানকার মানুষের জীবনধারা বদলে যাবে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস হবে। এজন্য পরিকল্পিত আবাসন দরকার।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বায়ুদূষণ কমাতে একটি আঞ্চলিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর এই অঞ্চলে নিয়মিত বায়ুমান পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আঞ্চলিক পর্যবেক্ষণ তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে, পরিবেশ অধিদপ্তরকে শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ বিবেচনা করতে হবে, যা পরিবেশগত ছাড়পত্র বা এ অঞ্চলে নতুন শিল্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এছাড়া পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক পানি মান পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তরকে সিএসটিপি এবং সিইটিপির নির্গমনস্থলে পানি মান পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সমন্বিত নিয়মিত এবং অনলাইনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে। এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য ওয়ারপো থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া বিশেষ করে ল্যান্ডফিল সাইটগুলোর জন্য একটি ভূগর্ভস্থ পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *