সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের ছবি নামাতে বলার জেরে এক সেলুন দোকানদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হলেন সাতক্ষীরা সদরের ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ‘মা’ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যানের চেয়ারম্যান এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাতক্ষীরা পৌর শাখার সভাপতি মমিনুর রহমান মুকুল। গতকাল সোমবার সকাল ১১ টার দিকে ব্রহ্মরাজপুর বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। এদিকে ওই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা শহরে কয়েকজন দূর্বৃত্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা মোমিনুর রহমান মুকুলকে মারপিট এবং প্রধান শিক্ষককে মারপিট করার খবরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন এবং একটি বাসের কয়েকটি জানালা ভাংচুর করেন।ব্রহ্মরাজপুর বাজারের সেলুনের দোকানদার বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট একদল পোলাপান স্কুলে যাচ্ছিল শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানোর জন্য। তখন আমি তাদের বলি বিশৃঙ্খলা করার দরকার নেই। চলো আমিও যাচ্ছি তোমাদের সাথে। যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠান আর আমার দোকানও স্কুলের সামনে। আমি যেয়ে বলবানি। তখন আমরা সকলে মিলে স্কুলে প্রদান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করে স্যারকে সালাম দেই। তখন প্রধান শিক্ষক বলে কি কারণে তোমরা এসেছো আমি বুঝতে পেরেছি। তখন আমরা বলি কি কারণ বলেনতো দেখি। তখন স্যার বলেন, ছবি দুটো নামাতে হবে? তখন আমরা বলি, হ্যাঁ স্যার ছবি দুটো নামিয়ে ফেলেন। তখন স্যার ছবি দুটো নামিয়ে ফেলেন। এরপর আমরা চলে আসলাম। ওই ঘটনার পর স্যারের সাথে আমার আর দেখা হয়নি। গতকাল সোমবার সকাল ১১ টার দিকে বাজারে জসিমের দোকানে আমি ফ্লাক্সিলোড দিতে গিয়েছিলাম। তখন দোকানে মুকুল স্যার এবং আহাদ ও বদরু নামে আমার দুই মামা বসে ছিলেন। আমি তখন জসিমকে ফ্লেক্সিলোড দেয়ার কথা বলার সাথে সাথে মুকুল স্যার আমার দিকে তাকান। আমি তখন স্যারকে সালাম দেই। স্যার সালামের উত্তর না দিয়ে আমাকে শুয়োরের বাচ্চা, রংবাজ, চাঁদাবাজ বলে গালি দেন। স্যার বলেন, এই ক্যাডার বাইরে থেকে আমার স্কুল ভাঙচুর করতে গিয়েছিল, চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিল, ছবি নামাতে গিয়েছিল। স্কুলের সামনে তো দোকান, তুই দোকানে বসে গাঁজার ব্যবসা করিস, তুই বিএনপির ক্যাডার, তোর ক্যাডারগিরি আমি ঘুচায় দেবো বলে আমাকে মারতে আসলে লোকজন থেকিয়ে দেন। এরপর আজ মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা শহরে স্যারকে কে বা কারা মারপিট করেছে বলে আমি দোকানে বসে শুনেছি। স্কুলের ছেলেমেয়েরা এসে আমার দোকান ভাংচুর করার প্লান করছে এমন সংবাদ দিয়ে কয়েকজন আমাকে দোকান বন্ধ করতে বললে আমি বিষয়টি বাজার কমিটির সভাপতিকে বলি। তখন সভাপতি আমাকে দোকান বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বললে আমি দোকান বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ৬ আগস্টে আমি স্কুলে যেয়ে অনেকের উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের ছবি নামাতে বলাই আমার অপরাধ হয়েছে। স্যারকে মারপিটের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এখন বিভিন্ন নম্বর থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। সরেজমিনে ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুলে যেয়ে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেঞ্চ দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে এবং একটি বাস ভাঙচুর করেছে। পরবর্তীতে বাজার কমিটির লোকজন এবং পুলিচ এসে রাস্তা থেকে শিক্সার্থীদের সরিয়ে দেন। এছাড়া ওই ঘটনার জেরে স্কুলের শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা থানার ওসি শামিনুল ইসলাম স্কুলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রধান শিক্ষককে মারপিট করার কারণে আমরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছি। আমরা আমাদের শিক্ষককে মারপিটের বিচার চাই। তবে কি কারনে প্রধান শিক্ষককে মারপিট করা হয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন শিক্ষার্থী সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে স্কুলের একাধিক অভিভাবক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার বাপের ছবি নামাতে বলায় বাহারুলকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে মারতে গেছেন স্বৈরাচারের দোষর মমিনুর রহমান মুকুল। তাকে মঙ্গলবার কে বা কারা মেরেছে তা তিনি নিজেও জানেননা। অথচ তার ব্যক্তিগত বিষয়টি প্রশাসনকে না জানিয়ে তিনি স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করিয়ে স্কুলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমরা স্বৈরাচারের দোষর মোমিনুর রহমান মুকুলকে অবিলম্বে বহিস্কারের দাবী জানাচ্ছি। এদিকে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয়দের সামনে গালি দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাতক্ষীরা পৌর শাখার সভাপতি মমিনুর রহমান মুকুল শুয়োরের বাচ্চা বলে বাহারুলকে গালি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এছাড়া কারা তাকে মেরেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে চিনতে পারিনি। সবার মুখোশ পরা ছিল। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র বলেন, ‘ছবি নামাতে বলার কারণে একজন প্রধান শিক্ষক কখনও কাউকে গালিগালাজ করতে পারেননা। আর তার ব্যক্তিগত বিষয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামানো ঠিক হয়নি। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। সাতক্ষীরা থানার ওসি শামিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা জানার পরপরই স্কুলে যেয়ে সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *