দেড়মাসের রোমাঞ্চকর লড়াই শেষ হয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার। এই মুহূর্তে সমীকরণ মেলানোর কথা সিরিজসেরা জাসপ্রিত বুমরাহ, প্যাট কামিন্স ও স্কট বোল্যান্ডদের বীরত্বগাঁথা কিংবা রোহিত–কোহলিদের চূড়ান্ত ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ। কিন্তু না, এক তরুণ ওপেনার, যার অভিষেকই হয়েছে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের চতুর্থ টেস্টে। সেই স্যাম কনস্টাসকে নিয়ে উভয় দল এখনও বাকযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সিডনিতে আজ (রোববার) দুই দিন বাকি থাকতেই শেষ হয়েছে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস শেষে ভারতের পুঁজি ছিল ১৬১ রান। বিপরীতে মাত্র ২৭ ওভারেই ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। ৩-১ ব্যবধানে জিতে ২০১৪–১৫ মৌসুমের পর প্রথম বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ অজিদের পকেটে গেল। এই জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টানা দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে তাদের জন্য আগে থেকেই অপেক্ষায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্বক্রিকেটের দুই পরাশক্তির লড়াইয়ের তেজটা অন্যরকম থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই, পুরো সিরিজে অনেক নাটকীয়তা ও আলোচিত ঘটনার জন্ম হয়েছে। যার একটি ৩৭ বছর বয়সী ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলির ১৯ বছর বয়সী স্যাম কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা। যে কারণে কোহলিকে শাস্তিও দিয়েছে আইসিসি। তবে তাতেই শেষ হয়নি সেই ঘটনার রেশ। কনস্টাস সেই ইস্যু মাঠের বাইরে আনতে না চাইলেও, খেলা চলাকালে দর্শকদের শোরগোলে উৎসাহ আর উত্তপ্ত করেছেন প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই সরব ভারতীয় ক্রিকেটাররা। যার রেশ তারা ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়েছে। ফলশ্রুতিতে জাসপ্রিত বুমরাহ’র বলে উসমান খাজা আউট হলেও, সফরকারী ক্রিকেটাররা সদলবলে গিয়ে উদযাপন করেছেন কনস্টাসের সামনে গিয়ে। যেন পুরো লড়াইটা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা তরুণ এই ওপেনারের সঙ্গে। কনস্টাস নিজেও সুযোগমতো উত্তেজনা বাড়িয়েছেন ম্যাচে। আবার কখনও তর্কে জড়িয়েছেন বুমরাহদের সঙ্গে। সিরিজ শেষেও ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর ও অজি অধিনায়ক কামিন্সের মুখে কনস্টাসের নাম। অবশ্য এর আগেরদিন অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডও ভারতীয় দলকে লক্ষ্য করে কড়া মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ও (কনস্টাস) ঠিক আছে কি না, সেটা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। স্পষ্টতই ভারত যেভাবে উদযাপন করেছিল, সেটা ভয়ের ছিল। এটা স্পষ্টতই খেলার আইন, নিয়মের মধ্যেই আছে। (ভারতীয়দের ওপর) কোনো নিয়মও চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ওভাবে ঝাঁক বেঁধে নন-স্ট্রাইকারের দিকে তেড়ে যায়, তখন সেই খেলোয়াড়ের দেখভালের দায়িত্ব থাকে আমাদের। নিশ্চিত করতে হয় যে ও ঠিক আছে এবং মানসিকভাবে এমন অবস্থায় আছে যে মাঠে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।’ প্রতিপক্ষ কোচের সেই মন্তব্যেরই আজ জবাব দিলেন রোহিত-কোহলিদের গুরু গম্ভীর, ‘দেখুন, শক্ত মানুষরাই এরকম শক্ত ম্যাচ খেলে। আপনাকে নরম হলে চলবে না। বিষয়টি যতটা সম্ভব সহজ করা উচিৎ, আমার মনে হয় না সেখানে ভয় দেখানোর মতো কিছু ছিল। তার (কনস্টাস) কোনো অধিকার নেই যে জাসপ্রিত বুমরাহ’র সঙ্গে কথা বলবে, যেখানে উসমান খাজা–ই (প্রতিক্রিয়া দেখাতে) সময় নিচ্ছিল। এটি আম্পায়ার এবং ব্যাটিং প্রান্তে যে আছে তার বিষয়।’

এখানেই শেষ নয়, কনস্টাস প্রসঙ্গ উঠেছে কামিন্সের সংবাদ সম্মেলনেও। তিনি বলেন, ‘(বল মোকাবিলার আগমুহূর্তে মোমেন্টাম প্রস্তুত প্রসঙ্গে) আপনি উইকেটে কিছুটা হেঁটে কাঁধ নাচিয়ে এরপর নিজের পছন্দের শট খেলতেই পারেন। আমি এটিকে অবৈধ কিছু মনে করি না, কিন্তু কিছু মানুষ সেটাকেই বিরোধীতার জন্য ইস্যু বানাচ্ছে। এবং বলতে চাচ্ছে– ‘‘সে (কনস্টাস) যেন তার জায়গাতেই থাকে।’’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *