নেত্রকোনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। জেলা জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে শীতের হিমেল হাওয়া। প্রচণ্ড শীতে ও
বোর ধান রোপন করছেন হাওর অঞ্চলের কৃষকরা।চলতি মৌসুমে হাওর অঞ্চলে বোর ধান আবাদ করতে গিয়ে শ্রমিকের অভাবে রোপন করতে দুশ্চিন্তায় আছেন এলাকার কৃষকরা।অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শ্রমিক সংগ্ৰহ করতে হচ্ছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে বেশি পরিমাণ জমির মালিকদের। জেলার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকরা না আসার কারণে শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানুয়ারি মাস শুরু হয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাওরে বোর ধান রোপন শুরু হয়েছে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে।ধুম চলছে বোরো ধান রোপনের কাজ।বিরাম নেই জমির মালিক ও শ্রমিক কারোর জন্য।এ সময় কয়েক বছর আগে ও বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমিকরা আসতো।এসব শ্রমিক না আসায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান রোপন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার কৃষকরা।

গত বছরের বর্ষায় অকাল বন্যায় হাওরের পানি নামতে দেরি হওয়ায় একদিকে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। অপরদিকে শ্রমিকের অভাবে রোপন কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। আবারো অকাল বন্যায় ধান তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এ বছর গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে।এ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এ বছর মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ১৭৬৩০ হেক্টর জমিতে, মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর গুলোতে ১৬৯৮০ হেক্টর জমিতে এবং খালিয়াজুরী উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে ২০২৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সিয়াদার গ্ৰামের সামনের ডিঙিউথা হাওর অঞ্চলে সরেজমিনে দেখা গেছে কৃষকরা দলবেঁধে ক্ষেত থেকে ধানের চারা তুলছেন। দলবেঁধে ক্ষেতে ধান রোপন করছেন। কেউবা ধান ক্ষেতে স্থানীয় নলকূপ দিয়ে পানি দিচ্ছেন। তবে কৃষকদের লম্বা সারি বেঁধে যে ধান রোপন করার দৃশ্য খুব কমই দেখা গেছে। জমির মালিকদের ভাষ্য গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় বাইরের শ্রমিকদের আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। ফলে তাদের জমিতে ধান রোপনের কাজ ধীরগতিতে চলছে। মদনের কৃষক হারাধন সরকার জানান, বেড়েছে হাওরে বোর ধান রোপনের খরচ। একজন শ্রমিক রোজ যেখানে ৫শ টাকা নিতে, এখন তাকে রোজ দিতে হয় ৬ শ টাকা থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত।তাও শ্রমিকের অভাবে রোপন কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। হাওরে আধুনিক রোপন মেশিন সরবরাহ করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো।সেচ খরচ ও আগের তুলনায় বেড়েছে। তার ওপর যখন কৃষক ক্ষেত থেকে নতুন ধান বিক্রি করেন তখন দাম কমে যায়। আবার যখন তারা ধান ক্রয় করেন তখন দাম বেড়ে যায়।

কৃষক ফজর আলী জানান,সার , বীজের দাম বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুতের সাথে জমিতে সেচ দেয়ার খরচ। শ্রমিকের অভাবে বেড়েছে ধান রোপনের খরচ। ফলে জমির মালিকদের বোর ধান চাষের খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। ধান চাষ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের কৃষকদের। অনেকেই আবার আত্মীয়ের সহযোগিতায় ধান রোপন করছেন। তবে এখন আর কেউ বিনামূল্যে দিন চাষের কাজে সাহায্য করতে আসে না। তাদেরকে পরিমাণে কিছুটা কম হলেও ও আর্থিক সুবিধা দিতে হয়।

খালিয়াজুরী এলাকার কৃষক জয়ন্ত দাস জানান,এত কষ্ট করে শ্রমঘাম দিয়ে খরচ করে এখন বোর ধান চাষ করতে হয়। এরপর ও এবছর এখনো ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়নি। অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষকের কষ্টের ফসল। তখন দুর্দশার শেষ নেই। হাওরে বোর ধান রক্ষা করতে স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ কাজ জরুরি হয়ে পড়েছে।এর কোন বিকল্প নেই।তা না হলে অস্থায়ী মাটির তৈরি বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে জমির ধান তলিয়ে যাবেই ,কারো কিছু করার থাকে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান,গত বন্যার কারণে এ বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। দরিদ্র কৃষকদের হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। জেলায় এবছর ১৮৫৩৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সরকার নির্ধারিত ধানের চারা রোপন করা উচিত, নতুবা ফলন কম হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে রোপন করা ও ঠিক নয় এতে ধানের চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় ধান নষ্ট হয়ে যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *