এবার বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। ১১ বছর পর ভয়ংকর এ যাত্রায় সফল হলেন আরেক বাংলাদেশি। রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি।

বেসক্যাম্প টিমের বরাতে অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আমাদের স্বপ্নসারথি বাবর আলী আজ সকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ৮টা এবং বাংলাদেশ সময় ৮টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্টের উচ্চতম চূড়া ছুঁয়েছেন। ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতি মাতা তাকে উচ্চতম চূড়ায় অবস্থান করার সুযোগ দিয়েছেন।

ফরহান জামান জানিয়েছেন, বাবর আলী এখন ক্যাম্প-৪-এ নামার পথে রয়েছেন। এটা ডেথ জোন বলা চলে। সেখানে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য ছবি পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

বাবর এভারেস্ট জয় করেই ক্ষ্যান্ত নন জানিয়ে অভিযানের এ প্রধান সমন্বয়ক আরও জানান, এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোয় আমরা ভীষণ আনন্দিত। কিন্তু বাবর আলীর লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়। তিনি একই সঙ্গে বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ লোৎসেও জয় করতে চান। রোববার ক্যাম্প-৪-এ নেমে মাঝরাতে আবারও পর্বতারোহণ শুরু করবেন বাবর। সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার (২০ মে) ভোরে লোৎসেও জয় করবেন তিনি।

ফরহান জামানের দেওয়া তথ্যমতে, এর আগে কোনো বাংলাদেশি লোৎসে পর্বতশৃঙ্গে সামিট করেননি। আবার একই অভিযানে দুটি আট হাজারী শৃঙ্গে চড়েননি। লক্ষ্য পূরণ হলে পর্বতারোহণে বাবর আলী বাংলাদেশের হয়ে ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবেন।

জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন বাবর আলী। সেখানে পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষে কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। প্রায় এক সপ্তাহ ট্র্যাকিং শেষে পৌঁছান এভারেস্টের বেসক্যাম্পে। সেখান থেকেই শুরু করেন মূল অভিযান।

বাবর আলীর আগে ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্ট জয় করেন মুন্সিগঞ্জের খালেদ হোসাইন (সজল খালেদ)। অর্থাৎ দীর্ঘ ১১ বছর বিরতির পর বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ জয় করলেন বাবর।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি। এরপর ২০১১ সালের ২১ মে মোহাম্মদ আবদুল মুহিত, ২০১২ সালের ১৯ মে নিশাত মজুমদার, ২০১২ সালের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন এবং ২০ মে সজল খালেদ এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। নিশাত মজুমদার প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন।

পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহণ

বাবর আলী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। ৩৩ বছর বয়সী এ যুবক লেখাপড়া শেষে শুরু করেছিলেন চিকিৎসাপেশা। তবে থিতু হননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন।

এভারেস্ট জয়ের আগে বাবর আলী সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মিটার), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মিটার), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মিটার), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মিটার), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মিটার), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মিটার), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মিটার) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ৫৯ মিটার) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন এ তরুণ।

বাবর আলীর আরও যত কীর্তি

বাবর আলী গত বছরের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেন। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িয়ে দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থেমেছিলেন। পথে ভারতের ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত বিভিন্ন অঞ্চল পাড়ি দেন তিনি।

তারও আগে ২০১৯ সালের পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি। চালিয়েছেন সচেতনতামূলক কার্যক্রমও। হেঁটে বাংলাদেশ ও সাইকেলে ভারতবর্ষ পাড়ি দেওয়া বাবর আলী এবার এভারেস্ট জয় করে লিখলেন নতুন গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *