১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন প্রস্তাবে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী সরকারের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানুয়ারিতে যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করবে সেখানে কিন্তু বর্তমান ১৭ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যারা ২০২৬ সালে ভোটার হবেন। ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করতে হলে ২০২৫ সালের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন করতে পারবে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি। সেক্ষেত্রে ২০২৬ সালেই ভোট করতে হবে।

তবে সংবিধান ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অনেকেই বলছেন, ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে হলে আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আন্তর্জাতিক শিশু সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। ঐসব দেশে ১৮ বছর বছরের নিচে বয়সীদের শিশু এবং এর ওপরের বয়সীদের প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশে শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে যারা তারা শিশু হিসেবে গণ্য হবে। সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তি ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হবেন না। এছাড়া ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে যে কোনো ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, ১৭ বছর করা যাবে না আমরা বলি নাই। সংবিধান আবার সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে তো বলা আছে ১৮ বছর। যদি সংবিধান পরিবর্তন করে ১৭ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়, আমরা সেভাবে কাজ করব। আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলি। অন্য কারো নির্দেশনায় চলি না। সংবিধানে যদি পরিবর্তন আসে ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা রেখে, তাহলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। ভোটার তালিকা আইনে সংশোধনী আনতে হবে।

গত ২৭ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জাতীয় সংলাপ-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘‘তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত। তবে যে কোনো সংস্কারের ব্যাপারে তিনি জাতীয় এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের কথা বলেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংসদ সদস্য হওয়ার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করতে চাই।’ তবে ২১ বয়সীদের প্রার্থী করা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এটি করতে হলে সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবের পরপরই জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত। এর অর্থ, এখন তাহলে আবার নতুন করে ভোটার তালিকা করতে হবে। আপনি প্রধান উপদেষ্টা, প্রথমেই বলে দিচ্ছেন, ভোটারের বয়স ১৭ হলে ভালো হয়। আপনি যখন বলছেন, তখন নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এটা ইলেকশন কমিশনের কাজ, তাদের ওপর ছেড়ে দিন।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এভাবে না বলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি আনা উচিত ছিল, এটি ভালো হতো। তাহলে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। মানুষের মনে এখন বেশি করে আশঙ্কা তৈরি হবে, এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, কালক্ষেপণ হবে। মানুষের মনে ধারণা তৈরি হচ্ছে, আমার না। তাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে, কেন যেন এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে। (ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর তো আছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি কমাতে চান, সেটি ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের মতে, নির্বাচনসহ নানা ধরনের সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিশন কাজ করছে। তারা এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেনি। বসবে কী না জানি না। কিন্তু ঐ কমিশনের প্রস্তাবের আগেই যদি প্রধান উপদেষ্টা ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছরের কথা বলেন তাহলে এটা কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তিনি মনে করেন, আসলে ভোটারের বয়স ১৭ করতে হলে আরও অনেক পরিবর্তন লাগবে। এটা সময় সাপেক্ষ। এখন অনেক নন-ইস্যুকে ইস্যু করে এই সরকারের যে মূল কাজ তা থেকে তারা দূরে সরছে। আমাদের দরকার নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভোটারদের বয়স ১৭ করার উদ্যোগকে জামায়াত সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলি তাদেরকে ভোটার করা হোক। রাস্তায় তো এরাই নেমে জীবন দিয়েছে। আপনি আমি যেটা পারিনি, আল্লাহর সাহায্য নিয়ে এসে অসাধ্য সাধন করেছে তারা। সোমবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে পথসভায় এসব কথা বলেন জামায়াত আমির। তিনি আরও বলেন, ‘যারা জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, আমরা দেশবাসী তাদের ভোটের অধিকার দিতে পারি না? আমরা চাই তারা ভোটের অধিকার পাক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *