২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল ছেড়ে অন্যদেশে পাড়ি জমিয়েছেন দেশটির ৮২ হাজার ৭০০ জন নাগরিক। এই সংখ্যা আগের বছর ২০২৩ সালের তুলনায় ২৭ হাজার ৪০০ জন বেশি। বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর। বিবৃতিতে বলা হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশ ছেড়েছেন গড়ে ৩৬ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি। ২০২৩ সালে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলা এবং তারপর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের নাগরিকদের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা ২০২৪ সালেও অব্যাহত ছিল।

পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইসরায়েলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে যারা বিদেশে গিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত, পেশাগতভাবে দক্ষ এবং বিগত বছরগুলোতে যারা ইসরায়েল ছেড়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্য, স্বজন কিংবা বন্ধু।

নাগরিকদের এমন গণহারে দেশছাড়ার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে ইসরায়েলের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত নিরাপত্তাজনিত কারণেই ইসরায়েল ছাড়তে চাইছেন তারা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।

হামাসকে হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), যা এখনও চলছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টম্বরে, লেবাননে অভিযান শুরু করে আইডিএফ। সে অভিযানে ইসরায়েলের অন্যতম শত্রু এবং সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রথম সারির প্রায় সব নেতা নিহত হওয়ার পাশপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গোষ্ঠীটির।

গত নভেম্বরে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এক রাতে দেড় শতাধিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান, এর জবাবে ইরানে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে আইডিএফের বিমান বাহিনী।

এদিকে গত প্রায় ১৫ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরায়েলের নাগরিকদের। সরকার প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ-সক্ষম নাগরিকের জন্য যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ যুদ্ধখাতে ব্যয় হওয়ার জন্য জীবনযাত্রার ব্যয়ও ইসরায়েলে বাড়ছে প্রায় প্রতিদিনই।

এছাড়া লেবানন এবং গাজা থেকে নিয়মিতই রকেট হামলা হচ্ছে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করে। যদিও ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে, কিন্তু নিয়মিত ঘটতে থাকা এসব হামলা ব্যাপকমাত্রায় নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করেছে অধিকাংশ ইসরায়েলির মনে।

ইসরায়েলের উদারপন্থি বিভিন্ন দল এবং রাজনীতিবিদরা নাগরিকদের এই গণহারে দেশ ছাড়ার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মেধা পাচারের শিকার হচ্ছে ইসরায়েল এবং যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে শিগগিরই দেশ প্রায় মেধাশূন্য অবস্থায় পৌঁছাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *