কোরবানির ঈদে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে সব ধরনের মসলার। বিশেষ করে গরম মসলার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এবার ঈদের তিন সপ্তাহ আগে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেশকিছু মসলার দামে রয়েছে স্বস্তি। গত বছরের তুলনায় কমেছে জিরা, লবঙ্গের দাম। তবে এলাচ, দারুচিনির পাশাপাশি দেশি হলুদ, শুকনো মরিচ, ধনিয়ার দাম কিছুটা চড়া।

গরম মসলার প্রায় পুরো বাজারটাই বিদেশনির্ভর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অনীহার পাশাপাশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মজুতদারির কারণেও মসলা বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার মিশ্র প্রভাব রয়েছে বাজারে।

আবার কেউ কেউ বলছেন, বাজারে মসলা পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোরবানি উপলক্ষ করে কৌশলে দাম বাড়াচ্ছেন। যারা দাম বাড়াচ্ছেন তাদের অনেকেই মসলা ব্যবসায়ী নন। অন্য ব্যবসা থেকে বিনিয়োগ তুলে বেশি লাভের আশায় মসলায় বিনিয়োগ করে বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

জানা যায়, গরম মসলার ৯০ শতাংশই আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এলাচ আমদানি হয় গুয়েতেমালা থেকে। ভারত থেকেও কিছু এলাচ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে। গরম মসলার মধ্যে অন্যতম লবঙ্গ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। মাদাগাস্কার থেকে অল্প পরিমাণে লবঙ্গ আমদানি হয়। বাজারে দারুচিনি আমদানি হয় চায়না ও ভিয়েতনাম থেকে।

বাংলাদেশে বেশি জিরা আমদানি হয় ভারত ও আফগানিস্তান থেকে। সিরিয়া, চায়না থেকেও জিরা আমদানি হয়। তবে ভালো মানের কারণে আফগানিস্তান ও ভারতীয় জিরার দাম বেশি থাকে। সরকারিভাবে ডিউটি বাড়ানোর কারণে কয়েকটি মসলার দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ২০২৩ সালে দারুচিনি, লবঙ্গ ও জিরা বেশি আমদানি হয়েছে। শুধু এলাচ আমদানি কমেছে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের চেয়ে গত বছর (২০২৩ সালে) ৫৬৭ টন ৩৯৬ কেজি লবঙ্গ বেশি আমদানি হয়। গত বছর লবঙ্গ আমদানি হয় ১৫শ ৫ টন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মে পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৮০ টন ৫শ কেজি।

২০২২ সালে দারুচিনি আমদানি হয় ২৭৪ টন ৮৩৫ কেজি। পরের বছর ২০২৩ সালে আমদানি হয় ৩২৫ টন ২৫৫ কেজি। চলতি বছর ১৪ মে পর্যন্ত দারুচিনি আমদানি হয়েছে ১শ টন ৩১৭ কেজি। ২০২৩ সালে এলাচ আমদানি হয় ৪ হাজার ৬৭৭ টন ২৯০ কেজি। আগের বছর এর চেয়ে ১ হাজার ৩২৪ টন বেশি আমদানি হয়েছিল। চলতি বছরের ১৪ মে পর্যন্ত এলাচ আমদানি হয়েছে ৬৮৭ টন ৮৮০ কেজি। একই সময়ে জিরা আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৫১৬ টন ৮২৫ কেজি। ২০২৩ সালে আমদানি হয় ৮ হাজার ৪৭৭ টন জিরা।

মঙ্গলবার (২৮ মে) সরেজমিনে খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, আমদানি কম হলেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়তগুলোতে কোরবানির অত্যাবশ্যকীয় এ উপকরণগুলোর জোগান রয়েছে। গত বছরের তুলনায় জিরা ও লবঙ্গের দাম কম থাকলেও বেড়েছে এলাচ ও দারুচিনির দাম। দেশি মসলার মধ্যে মরিচ, ধনিয়া, হলুদের দাম আগের বছরের তুলনায় চড়া।

বাংলাদেশ মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি এবং খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মেসার্স এবি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অমর কান্তি দাস বলেন, ‘পেঁয়াজ বাদেও এলাচ, জিরা, হলুদ, মরিচসহ বেশকিছু মসলাজাতীয় পণ্যের একটি অংশ ভারত থেকে আসে। ভারতে দাম বাড়লে আমাদের দেশে বাড়ে। পাশাপাশি ডলারের দামের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না অনেক আমদানিকারক। যার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজারে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *