পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চালাবে পেট্রোবাংলা। এজন্য নেওয়া হচ্ছে জোরালো প্রস্তুতি। চলছে দরপত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া। ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, পার্বত্য এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত করতে কনসালটেন্ট (পরামর্শক) নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যেই খসড়া চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা করছি। কারণ মার্চেই দরপত্র আহ্বান করতে চাই। পার্বত্য এলাকায় প্রচুর তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কাজ হয়নি। আমরা আশা করছি, সেখানে অনেক গ্যাসের মজুত রয়েছে।

পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তাই সেখানে তেল-গ্যাস তোলা কঠিন হতে পারে। এজন্য রাস্তা তৈরি করতে হবে। গ্যাস পাওয়া গেলে পাইপলাইনের নির্মাণ ব্যয় বহুল। তাই স্থলভাগের অতীতের পিএসসির তুলনায় দর কিছুটা বাড়িয়ে দরপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।

তবে বিদ্যমান আইনে বাপেক্স, কিংবা সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে ব্লক চুক্তি করার সুযোগ নেই। চুক্তি করতে পারে শুধু পেট্রোবাংলা।

একটি ফর্মুলা করা হয়েছে বাপেক্স বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে জেভি করে প্রস্তাব নিয়ে আসবে, পেট্রোবাংলা তা অনুমোদন দেবে। এখানে বাপেক্স কোনো বিনিয়োগ করবে না। তার বিনিয়োগ হচ্ছে জমি।

তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে আইওসি পেট্রোবাংলাকে যে শেয়ার দেবে, সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ পাবে বাপেক্স। এই ফর্মুলা অন্যান্য কোম্পানির জন্যও প্রযোজ্য হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ১৯১৪ সালে প্রথম কূপ (সীতাকুণ্ড) খনন করে বার্মা ওয়েল কোম্পানি। এরপর ১৯২২ সালে পাথারিয়ায় কূপ খনন করে। প্রায় ১২টি কূপ খনন করা হয়েছে। সর্বশেষ কূপ খনন করা হয় হালদায় (১৯৯৮ সাল)। এর মধ্যে সেমুতাং ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বরে গ্যাস পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৯টি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তেল-গ্যাস সম্পদের সম্ভাবনা নিরূপণে কাজ করে। কিছু সংস্থা সারা দেশে এবং কিছু সংস্থা বিশেষ এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলা, হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরেক্টরেট সমীক্ষা পরিচালনা করে। ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪, গড় ৩২ দশমিক ১ ও সর্বোচ্চ ৬৫ দশমিক ৭ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ঘনফুট) গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে।

অপরদিকে হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরেক্টরেট সর্বনিম্ন ১৯, গড় ৪২ ও সর্বোচ্চ ৬৪ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *