এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। কেবল বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দেখা মেলে। এরই মাঝে আবার বাধ সেধেছে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের খেলতে না চাওয়ায়। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থান ও দোলাচল কাটাতে পারেনি খোদ আইসিসিও। পুরো পরিস্থিতির জন্য ভারতের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাবেক পাক তারকা কামরান আকমল। সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার ভারতের আচরণকে দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ভারতের মাটিতে পাকিস্তানকে খেলতে নিয়ে গেলেও, পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে রাজি নয় রোহিত-কোহলিদের দল। এজন্য দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা ও ভারত সরকারের অনুমোদন না পাওয়ার কথা জানিয়ে আসছে ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত আইসিসির ইভেন্টেও যেন উভয় দলকে একই গ্রুপে না রাখা হয় সেই দাবিও তুলেছেন কামরান।

পাকিস্তানের মাটিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি ঘোষণা করে আইসিসি। কিন্তু ভারত দেশটিতে খেলতে অসম্মত হওয়ায় হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের আলোচনা উঠেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও (পিসিবি) আবার এই মডেলে টুর্নামেন্টে অংশ না নেওয়ার অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। যা নিয়ে গতকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে বোর্ডগুলোকে নিয়ে সভায় বসে আইসিসি। তবে ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেই সভা স্থগিত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যম টেলিকম এশিয়া স্পোর্টের কাছে ক্ষোভ নিয়ে কামরান আকমল বলেন, ‘আইসিসি সাময়িকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, আমি মনে করি স্থায়ী সমাধানের এখনই সময়। যদি এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাইব্রিড মডেলে যায় এবং ভারত পাকিস্তানে খেলতে না আসে, তাহলে ভারতের সকল আইসিসি ইভেন্টই একই মডেলে আয়োজন করতে হবে। তাহলে পাকিস্তান আর ভারতে খেলতে যাবে না। এমনকি দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না খেলা পর্যন্ত আইসিসি কোনো ইন্দো-পাক ম্যাচ না রাখাটাও একটা সমাধান হতে পারে। যদি তারা দ্বিপাক্ষিক ম্যাচে সম্মতি দেয়, তবে কয়েক-জাতি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যাবে।’ ২০১৬ বিশ্বকাপের পর ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারতের মাটিতে গিয়ে অংশ নিয়েছে পাকিস্তান। সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কামরান বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ যে পাকিস্তান ভারতে ২০১৬ বিশ্বকাপ খেলেছে, অথচ তাদের ম্যাচ ধর্মশালা থেকে কলকাতায় সরিয়ে নেওয়া হয়। গত বছরও একইভাবে তাদের চাওয়ামতো আহমেদাবাদে খেলেছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে পাকিস্তানের কঠোর হওয়া উচিৎ। যা পাকিস্তানেরও ভালো ইমেজ তৈরি করবে।’ এরপর ভারত দ্বিচারিতা করছে উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়েন পাকিস্তানের হয়ে ২৬৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই তারকা, ‘একদিকে রাজনৈতিক ইস্যুর কথা বলে পাকিস্তানে খেলতে রাজি নয় ভারত, আবার অন্যদিকে তারা চায় আমরা যেন তাদের মাটিতে গিয়ে খেলি, এটা তাদের দ্বিচারি মনোভাব (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড)।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের পর আর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে তাদের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা নিয়েও নাটকীয়তা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিকে, মুম্বাই হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে যেতে ২০১২-১৩ মৌসুমের পর বন্ধ হয়ে যায় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। গত বছর এশিয়া কাপেও ভারতের চাওয়ামতো হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করা হয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *