বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এটা (শ্বেতপত্র) ঐতিহাসিক দলিল। এখান থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা বের করা যাবে।’ গতকাল রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
কমিটির তিন মাসের অনুসন্ধানের পর জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচারের তথ্য উঠে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের গরিব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশির ভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি আনন্দিত এটা জেনে, কাজটা করতে গিয়ে একটা বৃহৎ গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অভিমত নেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্রে প্রস্তাবিত যে সংস্কার বা পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, গত ১৫ বছরে লুটপাট করে যে টাকা দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে, সেই টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। এটি সরকারের অন্যতম একটি অঙ্গীকার। সেই লক্ষ্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ (এফবিআই) এ বিষয়ে যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে কী করা যায়, তা নিয়ে সিরিজ মিটিং হচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর থেকে একটি ঘণ্টাও নষ্ট করছেন না। সব পক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।