বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমান পরিস্থিতি একা সামাল দিতে পারবে না। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র শক্তি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারত তাদের সব প্রতিবেশীকে বৈরী প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশকে তারা সেভেন সিস্টার্সের একটি রাজ্যের মতো দেখতো। ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক স্বার্থে অবস্থান নিয়ে বিগত সরকার এ দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করেছে তিনি আরো বলেন, ঐক্যের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মতপার্থক্য আছে। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রয়োজন। এর বাইরে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পক্ষের নানা অ্যাজেন্ডা আছে। তাই এখানে আমাদের একটা জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে। বৈষম্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রে আছে। এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার ছাড়া আমরা সামনে এগোতে পারব না। আগামী জানুয়ারির মধ্যে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে বিদায় নিতে পারে তাহলে এটা হবে তার সবচাইতে বড় সাফল্য।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান মাহবুব মোর্শেদ বলেন, কীভাবে আমরা বহু মতাদর্শের মধ্যকার বিরোধ নিরসন করতে পারি, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাষ্ট্রধর্ম, সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নগুলোর সুরাহা করতে গেলে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে কিনা আমরা জানি না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। কেউ বলছে, বেশি সময় নেন, কেউ বলছে দ্রুত নির্বাচন দেন। এই অবস্থায় সংবিধান, নির্বাচনের প্রশ্নে বিরোধ অবশ্যই হবে। অর্থাৎ আমরা সংস্কারের জায়গাটা তৈরি করতে পারছি না। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্মের মানুষ একটা জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল ৫ আগস্টে। এখন কেউ যদি এখানে ডানপন্থি রাষ্ট্র গঠন করতে চান সেটা সম্ভব না, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলেও সম্ভব না। আমাদের বিবাদ সত্ত্বেও একটা সুনির্দিষ্ট মধ্যবিন্দুতে এসে পৌঁছতে হবে। যেখান থেকে বাংলাদেশ নতুন একটা অভিযাত্রা শুরু করতে পারবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা সবাই রাষ্ট্র, সমাজের ভাল চাই, এটা আমাদের ঐক্যমত্যের ভিত্তি। আমার মনে হয়েছিল আমার জীবদ্দশায় শেখ হাসিনার পতন দেখতে পাব। কি থেকে কী হয়ে গেল এটা কেউ ভাবতে পারেনি। মা তার সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন মুখ বন্ধ করে ছিলাম। এখন সেই বাধাটা মুক্ত হয়ে গেছে। আমরা এখন কথা বলতে পারছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যা ইচ্ছা তাই বলতে হবে। যারা নীতি নির্ধারণে আছেন তাদের সবকিছু নিয়েই ভাবতে হবে।
সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার রাজনৈতিক সরকার করবে। যে অবস্থায় ছিলাম তা থেকে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছতে চাই, তাহলে আমাদের কিছুক্ষেত্রে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই দরকার। নির্বাচনের জন্যই এতকিছু হয়েছে। তাই ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না। ২০০৭ সালে সংস্কার সংস্কার সবাই করছিল, কিন্তু কিছু হয়েছে? যারা সংস্কার চেয়েছিল তারা পার্টি থেকে বাদ হয়ে গিয়েছিল। সংস্কারপন্থি গালি হয়ে গিয়েছিল। তারা সংস্কার করতে গিয়ে মাইনাস টু করতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদরা দেশ চালাতে পারবে, কিন্তু আপনারা গণতন্ত্র পাবেন না। তাই একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যে দশটা সংস্কার কমিশন হয়েছে তাদের শিগগিরই রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তিনমাসের মধ্যে একটা পর্যালোচনা হোক, এখন কি করা যায়, নির্বাচিত সরকার এলে কি কি করবেন। এগুলোর তো ধারাবাহিকতা লাগবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবের আগে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকেই খুঁজে পাওয়া যেত না। আর দেশে পিতা ছাড়া আর কেউই কিছু করেনি। ৫ আগস্টে দেখলাম, সবাই আছে শুধু আওয়ামী লীগ নেই। এই বৈচিত্রের ঐক্যই বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান একটা শিক্ষা দিয়েছে যে, তোমরা যতই ক্ষমতাসীন হও জনগণের শক্তির সামনে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ছবি সড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য দূর না করলে ফ্যাসিবাদ যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতি শেখ আব্দুন নুর বলেন, দেশ একটা সুন্দর জায়গায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন সঠিক পথে থাকে আমরা সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকব।