এ মুহূর্তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে তা হবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফাইনাল মাইলস্টোন। সেটা হবে ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা। এছাড়া একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করলে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কি না, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে। কারণ, সেখানে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক থাকে। সেগুলো সেটেল না করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে জটিলতা বাড়বে। ফলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অন্যদিকে একই দিনে দুই ভোট বাস্তবায়ন করা গেলে অনেক ধরনের অনিয়ম-কারচুপি রোধ করা সম্ভব হবে বলেও মত পাওয়া গেছে।
ভোটকেন্দ্রের বুথ দখল রুখতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আয়োজনের কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বুধবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা রয়েছে একই দিনে ইউপি আর জাতীয় নির্বাচন করার। তাহলে বুথ দখলটা আর সহজ হবে না। তখন মেম্বার প্রার্থীরা ওয়ার্ডভিত্তিক পাহারা দেবেন। তাহলে কেন্দ্রীয়ভাবে আর কেউ বুথ দখল করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা সুপারিশ করব।
তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু যুগান্তরকে বলেন, প্রথমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এটাই প্রত্যাশিত। এরপর স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এটাই বিএনপি প্রত্যাশা করে। এখন তারা ভাবছে। ফলে ভাবা নিয়ে তো কোনো আলোচনা হয় না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে বলেন, আমরা তো এখনো অফিসিয়ালি বসে এ বিষয়ে কোনো ফরমাল আলোচনা করিনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একসঙ্গে দুটি নির্বাচন করা কঠিন হবে। একই দিনে দুটি নির্বাচন হলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আমার মনে হয়, দুটি নির্বাচন আলাদা তারিখে হলেই ম্যানেজমেন্টের জন্য সুবিধা হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে তো এরকম আগে হয়নি। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কি না, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে। কারণ, সেখানে চেয়ামরম্যান পদে তো দলীয় প্রতীক থাকে। ফলে সেগুলো সেটেল না করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে তো জটিলতা বাড়বে। ফলে সেদিকে না যাওয়াই ভালো। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারণ, এটি নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, এটি আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ এখন অপেক্ষা করছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। ১৬ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে অবাধ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা। জাতীয় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এটাই হবে ফাইনাল মাইলস্টোন। যেখানে আমরা একটি ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করব। ফলে জাতীয় নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান মনোযোগ দেওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচনে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর যুগান্তরকে বলেন, ৫৩ বছরের নির্বাচনের ইতিহাসে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, এগুলো প্রত্যেক নির্বাচনেই কমবেশি হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মুয়ীদ চৌধুরী যে কথা বলেছেন, জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন যদি একই দিনে করা যায়, তাহলে ইউপি নির্বাচনে ৯টা ওয়ার্ড থাকে, একটা ইউনিয়ন পরিষদ থাকে। ৯টা ওয়ার্ডে ৯ জন মেম্বার নির্বাচন করেন। তারা একেবারেই তৃণমূলের সাধারণ মানুষ। সেখানে দলের চেয়ে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি গুরুত্বপর্ণ। ফলে একই দিনে নির্বাচন হলে ওয়ার্ডগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বা প্রশাসনের পাশাপাশি মেম্বার প্রার্থীরাও কিন্তু অনিয়ম ঠেকাতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। ফলে আমি মনে করি, এটি বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে একটা খুবই যুক্তিযুক্ত চিন্তাভাবনা। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে আমিও মনে করি ভোটে অনেক ধরনের অনিয়ম-কারচুপি রোধ করা সম্ভব হবে।