বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ জনকে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই বৃত্তি প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

এদিন ৩০ জন শিক্ষার্থীকে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরও ৭০ জনকে এই সহায়তা দেওয়া হবে।

জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ রায়হানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৃত্তি দেওয়া প্রত্যেক ছাত্রের জন্য একজন করে দাতা অভিভাবক থাকবে। পরীক্ষার সময় যদি কোনো কারণে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, সেটাও তার দাতা অভিভাবককেই বলবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের এ স্কলারশিপ প্রদানের উদ্দেশ্য হলো- আহত শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার কিংবা অন্য কারও ওপর যাতে নির্ভর না হয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সবার চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি এসোসিয়েশন। আয়োজকদের এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আহত শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানে ঢাকা কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘ ছয় মাস হয়ে গেল স্বৈরাচার সরকার পতন হওয়ার। কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছুই করেননি। এই আন্দোলন করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কেউ মনে রাখেনি, রেখেছে যাদের নির্দেশে আন্দোলন হয়েছে শুধু তাদের।

বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্র শহীদ আহনাফের মা বলেন, গত ৪ আগস্ট মিরপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় আমার ছেলে। গুলি লাগার পরে আমি তাকে দেখিনি, দেখেছি লাশ গোসল করিয়ে আনার পর। ছেলের লাশ দেখার পর থেকেই আর ঘুম হয় না আমার। কিন্তু এই সব কিছুর বিচার আমি কার কাছে চাইবো? অপরাধী পুলিশরাও জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানদের রক্তে যারা গদিতে বসেছে, তারা কী করেছে আমাদের জন্য? যাদের এক ডাকে আপনারা রাস্তায় নেমেছিলেন, তারা কি কিছু করেছে আপনাদের জন্য?

শহীদ শাহরিয়ার হোসেন আলভীর বাবা বলেন, আলভী আমার একমাত্র সন্তান। ও আর নেই। অথচ আমাকে নিরাপত্তার জন্য ট্রাইব্যুনালে যেতে হয়। আমার মনে হচ্ছে তারা বিচারের নামে একটা রঙ্গমঞ্চ তৈরি করেছে। আশা দেখিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা কিছু চাই না। আমরা শুধু আমাদের সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।

ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, আমার ছেলে ফাইয়াজ ধানমণ্ডিতে ১৮ই জুলাই শহীদ হয়। শনিবার সেই ১৮ তারিখ। প্রতি মাসের এই ১৮ তারিখে আমার বুকে যেন রক্তক্ষরণ হয়।

সাতক্ষীরা থেকে আসা এক আহত শিক্ষার্থী বলেন, ৫ আগস্ট আমার পায়ে গুলি লাগে। পরে আমার পা কেটে ফেলা লাগে। রংপুর সরকারি কলেজ থেকে রনি বলেন, আসলে আমরা কেউ ভালো নেই। প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে অথচ জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে আমরা আহতরা একটি টাকাও পাইনি। জুলাই সিটি ফাউন্ডেশনের লিস্টে প্রায় ১৬ হাজার জন আছে। কিন্তু কাউকেই কোনো আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়নি। আমরা অতি শিগগিরই মাঠে নামবো যদি সাতদিনের মধ্যে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার না পাই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *