মাদারীপুরে কামাল মাতুব্বর (৫৫) নামে এক ‘মানবপাচারকারী মাফিয়া’কে গণপিটুনির ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুব্বরকে বেশকিছু লোকজন ঘিরে ধরে মারধর করছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে কামাল একটি মামলার হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিলেন। পরে একাধিক ভুক্তভোগী তাকে গণপিটুনি দিয়ে মাদারীপুর সদর থানায় সোপর্দ করেছেন। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও প্রতিরোধ দমন আইনে একাধিক মামলায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শতাধিক যুবককে উন্নত জীবন আর ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায় কামাল মাতুব্বর। পরে তাদের লিবিয়া দিয়ে অবৈধপথে ইউরোপের দেশ ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর লিবিয়াতে আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করেন। তারপর হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এমনই ভুক্তভোগী রাজীব মাতুব্বর, নিজাম, তাইফুল, তাহের, মুজাম হাওলাদর, শাহাবুদ্দিন, তারেক মাতুব্বরসহ শতাধিক যুবকের পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৩-১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কামাল মাতুব্বর। এরপরে লিবিয়া পৌঁছালে মাফিয়াদের হাতে বিক্রি করেন মানবপাচারকারী কামাল মাতুব্বর। লিবিয়ার মাফিয়ারা বন্দিশালায় আটকে রেখে যুবকদের উপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে পরিবারকে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ২০-৪০ লাখ হাতিয়ে নেয় মাফিয়া ও মানবপাচার চক্র। প্রতিটি পরিবার ভিটেমাটি সহায় সম্বল বিক্রি দালালের হাতে টাকা তুলে দিয়ে হন নিস্। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে লিবিয়ার বন্দিশালা থেকে কেউ কেউ ফিরে আসতে পারলেও অনেকে এখনও নিখোঁজ। নিখোঁজ ও বন্দীদের ফিরে পেতে মানবপাচারকারী কামাল মাতুব্বরের বাড়িতে ভিড় করেন ভুক্তভোগী পারিবার ও স্বজনরা। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঁ ঢাকা দেন কামাল মাতুব্বর। ভুক্তভোগীরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে বৃহস্পতিবার কামাল আদালতে হাজিরা দিতে আসবে। কামাল হাজিরা দিতে গেলে ভুক্তভোগীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে গণপিটুনি দিয়ে আটক করে মাদারীপুর সদর থানায় সোপর্দ করেন।
ভুক্তভোগী রাজিব মাতুব্বর বলেন,কামাল মাতুব্বর লিবিয়া পাঠিয়ে আমাকে একটা অন্ধকার ঘরে এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন করে। আমার পরিবার থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরে এসেছি। আমি মানবপাচারকারী দালাল কামাল মাতুব্বর এর শাস্তি চাই।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আসামি কামাল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলায় হাজিরা দিকে আদালতে এসেছিল। পরে লোকজন তাকে ধরে এনে পুলিশে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও সব মামলায় জামিনে রয়েছে। তাই আদালতের রি-কল দেখে তাকে পরিবারের জিম্মায় বৃহস্পতিবার রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের জিম্মায় ছিল।