গৌরনদী সংবাদদাতা: বরিশালের গৌরনদী পৌরসভায় এক কর্মচারীর ওপর হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ফরিদ মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। গত ১১ মার্চ এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রবিবার দিবাগত রাতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রকাশিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ফরিদ মিয়া দলবল নিয়ে গৌরনদী পৌরসভা কার্যালয়ে প্রবেশ করে পৌরসভার কর্মচারী গিয়াস উদ্দিন খন্দকারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাকে মারধর করেন। এতে ফরিদ মিয়া সাংগঠনিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছেন এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রেক্ষিতে, কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় (নয়াপল্টন)-এ জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ দুপুরে অফিস চলাকালীন সময়ে গৌরনদী পৌরসভার পানি শাখার কর্মচারী এবং উপজেলা শ্রমিক দলের সদ্য প্রয়াত সভাপতি মহিউদ্দিন খন্দকারের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন খন্দকারের ওপর ফরিদ মিয়া ও তার সহযোগীরা অর্তকিতভাবে হামলা চালান। এ সময় তারা গিয়াস উদ্দিনকে মারধর ও গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পূর্বের সহিংসতার ইতিহাস: ফরিদ মিয়া’র বিরুদ্ধেও উঠেছে কাউন্টার দখলসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই হানিফ পরিবহণের কাউন্টার দখল করেন তিনি। বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ফরিদ মিয়ার ভাই নাসির মিয়া ছিলেন যুবলীগ নেতা। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার প্রভাব খাটিয়ে চলতেন ফরিদ। নাসির ছিলেন সাবেক মেয়র হারিসুর রহমানের ক্যাডার। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নাসিরের একটি মিষ্টির দোকান এবং ফরিদের একটি হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে। ৫ আগস্টের পর নাসির এলাকা ছাড়া হলে তার দোকানের দেখাশোনাও করেন ফরিদ।
দখলবাজি চলছেই: গৌরনদী বাস স্ট্যান্ডে থাকা ১৪টি কাউন্টার ৫ আগস্টের পরপরই দখল করে নেয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। উপজেলার সব সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে বর্তমানে বিএনপি নেতাদের প্রভাব বিস্তার লক্ষণীয়। তাদের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অভিযুক্তদের বক্তব্য: অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান মুকুলকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ‘একটি সালিশে আছেন পরে কথা বলবেন’ বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, পানের আড়ৎ, বাস স্ট্যান্ড দখলসহ বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ফরিদ মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি দলের পরিচয় ব্যবহার করে বেআইনি উপায়ে সম্পদ অর্জনে জড়িত বলে জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও সংঘর্ষ ও দখলের ঘটনা থামানো সম্ভব হচ্ছে না। থানায় কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ না করায় প্রশাসনের পদক্ষেপ সীমিত রয়েছে।