ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর (বীরউত্তম) গ্রেপ্তার হয়েছেন। সরকার পতনের পর থেকে তিনিও আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঝালকাঠির রাজাপুরে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে উপজেলার পেংড়ি এলাকায় তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তিনিও সামান্য আহত হন। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় থানায় আশ্রয় নিলে বাইরে তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিছুক্ষণ পর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়।
প্রায় সাড়ে চার দশক বিএনপির রাজনীতি করেছেন শাহজাহান ওমর। দলের মনোনয়নে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য। দায়িত্ব পালন করেছেন একাধিক মন্ত্রণালয়ে। ২০২৩ সালে তিনি রাজধানীর একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টান। দল বদল করে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এমপিও বানানো হয় তাঁকে। তবে সাত মাসের মাথায় ধসে গেছে মসনদ। আওয়ামী লীগে যাওয়ার বর্ষপূর্তির আগেই জেলে গেলেন দলছুট এ নেতা। জব্দ করা হয়েছে তাঁর গাড়িটি।
জানা গেছে, ওমরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায়। ২০ নভেম্বর কাঁঠালিয়া থানায় অভিযোগটি করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন। এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ ডিসেম্বর কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয় শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে।
গতকালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শাহজাহান ওমরের গাড়ি পেংড়ি এলাকায় পৌঁছালে গতিরোধ করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী। ইটপাটকেল মেরে গাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। ওমরকে বের করার চেষ্টা করা হলে গাড়িচালক কৌশলে রাজাপুর থানায় চলে যান। সেখানে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ করেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। উত্তেজিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে হাজির হন সেনাসদস্যরা। গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হলে সেখানেও বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধরা। তাঁকে বহনকারী গাড়িতে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করা হয়। আদালত চত্বরে মিছিল করা হয় জুতার মালা নিয়ে। এর মধ্যেই দুপুরে ওমরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাহজাহান ওমর জানান, নিজ এলাকায় তাঁর ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ন্যক্কারজনক। বাকওয়াজ মামলায় তাঁকে আটক করা হয়েছে। তিনি বের হয়ে যাবেন এবং তিনি এ দেশে আবারও এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন।
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন জানান, আদালতে ওমরের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় বিচারক তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম বলেন, শাহজাহান ওমর একটি বিষয়ে রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে কাঁঠালিয়া থানার নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্নেই বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন শাহজাহান ওমর। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখা অধিকাংশ মানুষের অভিমত, সব সময়ে ক্ষ্যাপাটে আচরণ, দাম্ভিকতা, অহরহ অশ্লীল ভাষার ব্যবহার শাহজাহান ওমরের নিয়মিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
ওমরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী চার দলীয় জোট সরকারের আইন ও পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শাহজাহান ওমর। রাজাপুর-কাঁঠালিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগ নেই। তবে নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্যের বহু অভিযোগ রয়েছে। এর পর টানা ১৬ বছর বিরোধী দলে থাকায় দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাত মাসের এমপি ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন– এমন অভিযোগ দুই উপজেলায় প্রায় সবার মুখে মুখে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি জালালুর রহমান আকন বলেন, ‘ওমর বড় নেতা ছিলেন। তিনি নিজের মতো করে দল চালাতেন। কাউকে সম্মান দিতেন না। নেতাকর্মীকে ‘তুই’ ভাষা দিয়ে শুরুতেন, তার পরে যা বলতেন তা উচ্চারণ করার মতো নয়।’