একেবারেই শেষ সময়ে এসে পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়ছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া আরও কয়েকটি খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়বে না। অর্থাৎ এক খাতের বরাদ্দ খরচ করা হবে অন্য খাতে। এজন্য ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট’টির আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবটি নিয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান। সেখানে পরামর্শকসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তবে ইতোমধ্যেই এক বছর বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। ফলে ৪ বছরের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে প্রায় ১৪ বছর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, কেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এত বেশি সময় লাগছে সে বিষয়ে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি শেষ সময়ে এসে পরামর্শক ব্যয় কেন বাড়ছে সেটিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। পরামর্শকদের টিওআর পরীক্ষা করে দেখতে হবে সামনে তাদের কি কাজ আছে। এরপরই ব্যয় বাড়ানো যেতে পারে। এখানে অন্য খাতে টাকা বেঁচে যাওয়ায় পরামর্শক খাতে খরচ করতে চাওয়া হচ্ছে কিনা সেটিও একটি প্রশ্ন। এছাড়া সেতু বিভাগের নিজস্ব এত ইঞ্জিনিয়ার থাকতে ইন্ডিপেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এই মুহূর্তে কেন লাগবে সেটি ভালোভাবে দেখতে হবে।

সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। মূল প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে পিপিপির শর্ত অনুযায়ী সাপোর্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে। এর আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও ভবন অপসারণ, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, পরিবেশ ও সামাজিক সমীক্ষা, আর্থিক মডেলিং, হস্তান্তর ও আইনগত বিষয় দেখভাল ইত্যাদি। আরও আছে স্বাধীন পরামর্শকের মাধ্যমে মূল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ তদারকি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন ভিলেজ তৈরি করা।

শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সাপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৯০ কোটি ৩২ লখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে প্রকল্পের অন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমে পরামর্শক খাতে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ খাতে বর্তমান বরাদ্দ আছে ১৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এছাড়া অপ্রকাশিত ব্যয় খাতে বর্তমান বরাদ্দ ২ কোটি টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ২ কোটি ৯ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মিটিং বা ওয়ার্কশপের সম্মানি ভাতার ক্ষেত্রে ৩২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৭২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব খাতের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সাপোর্ট প্রকল্পটির আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি এখনো শতভাগ কেন হয়নি সে বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক প্রকল্প হিসাবে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এরপর নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তিসহ নানা কারণে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৪ হাজার ৯১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এছাড়া মূল অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর প্রথম সংশোধনের সময় ৬ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ না হলে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে সাড়ে ৩ বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ সম্প্রতি প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে সাড়ে ৩ বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে প্রায় ১৪ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *