চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার হয়েছে। গত অর্থবছর যা ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩৫ ডলার। বর্তমানে টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা। ফলে এই প্রথম তিন লাখ টাকা ছাড়ালো মাথাপিছু আয়। যদিও ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত সোমবার (২০ মে) রাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। যদিও এটি চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাব।

তবে মাথাপিছু আয়ের হিসাবকে শুভংকরের ফাঁকি বলছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, গত এক বছরে শ্রমজীবী মানুষের মজুরি সেভাবে বাড়েনি। এ সময়ে দেশে কোটিপতিদের আয় বাড়লেও গরিবদের আয় বাড়েনি সেভাবে। তবে বিবিএস মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির যে তথ্য দিয়েছে, এতে কোটিপতিদের আয়ের হিসাব গরিবের সঙ্গে যোগ হয়েছে। যদিও গরিবরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল পায়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ডলারের আগের দাম দেখানো হতে পারে। আবার বর্তমানে টাকার অঙ্কে কনভার্ট করলে বেড়ে যাবে। এটা শুভংকরের ফাঁকি। যেটা দেখানো হচ্ছে এটা প্রকৃত আয় নয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের আয় বাড়েনি, মজুরিও বাড়েনি। ফলে হিসাবটা মিলছে না। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা বেড়েছে। কোটিপতিদের আয়ের হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে।’

দেড় দুই বছর ধরে ডলারের দাম বেশ বেড়েছে। ৮৬ টাকার ডলারের দাম উঠেছে ১১৭ টাকায়। ফলে মাথাপিছু আয়ে এর প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৮৪ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৩৫ ডলার বেড়েছে। ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর মাথাপিছু আয়ের হিসাবে প্রতি ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরেছে বিবিএস। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। ফলে অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাবে ডলারে মাথাপিছু আয় আরও কমতে পারে।

তবে টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ শতাংশের মতো। অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় যা ৩২ হাজার ৭৮৪ টাকা বেশি।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মাথাপিছু আয় বাড়লেও আমরা এর সুফল ঠিকভাবে ভোগ করতে পারছি না। কারণ দেশে নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। আমরা ১০০ ডলার দিয়ে যেসব জিনিসপত্র কিনতে পারবো ভারতে আরও বেশিকিছু কেনা যাবে। আমাদের এখানে সবকিছুর দাম বেশি। ফলে মাথাপিছু আয় বাড়লেও সেভাবে সুবিধা বাড়েনি। মাথাপিছু আয় কিন্তু প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতার নিচে।’

‘তিন বছর ধরেই ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় অনেকটা এক জায়গায় রয়েছে। এর অর্থ হলো, ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে জীবনযাত্রার মান তেমন বাড়েনি। জাতীয় আয়ে গরিব মানুষের ভাগ কমেছে, তাদের আয় কমেছে।’

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। তাই গরিব মানুষের আয় বাড়ানোর সুযোগ সীমিত।’

মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরে আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। মোট জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়।

করোনা মহামারির পর থেকে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। ২০২১-২২ অর্থবছরে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় হয়। ওই অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। পরের বছর তা কমে ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে নামে। এ বছর আবার তা বেড়ে ২ হাজার ৭৮৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭০০ ডলারের ঘরে আছে।

১০ বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ
গত ১০ বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৩১৬ ডলার। পরের আট বছর একটানা মাথাপিছু আয় বেড়েছে। করোনা মহামারির আগপর্যন্ত অর্থনীতিও বেশ চাঙা ছিল। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছি উন্নীত হয়। ফলে মাথাপিছু আয়েও তার প্রতিফলন দেখা গেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *