সারাদেশে সাধারণ আনসার সদস্যদের (অঙ্গীভূত) কাছ থেকে অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সদস্যদের নামের একটি প্রাথমিক তালিকা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি বাহিনী থেকে তাদের স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে বলে আনসার সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৫ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রায় ১০ হাজার সাধারণ আনসার সদস্যের তালিকা এসেছে সদরদপ্তরে। তাদের মধ্যে ঘটনার দিন যারা মাঠে ছিলেন এবং আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের গত সোমবার কর্মস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আর যারা ব্যারাক থেকে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন, তাদের ব্যারাকে ফিরতে দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামেন সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী। সাধারণ আনসার সদস্যরাও আন্দোলনে নামেন। চাকরিতে ছয় মাসের ছুটি, নতুন নিয়োগ বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। গত ২০ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তারা চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবি তুলে ধরেন। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও করেন এবং দাবি না মানা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেন। পরে রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
আনসারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেওয়া, তাদের সংগঠিত করা এবং সমর্থন জোগানো– এমন তিন ক্যাটেগরিতে সদস্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে যারা সরাসরি সংঘর্ষে অংশ নিয়েছেন তাদের চাকরি চলে গেছে বা যাচ্ছে। বাকিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে পরে। আন্দোলনকারীর তালিকায় জেলা কমান্ড্যান্ট পর্যায়ের নামও আসছে। তারা পরোক্ষভাবে আন্দোলনে ইন্ধন দিয়েছেন।
আনসারের একাধিক জেলা কমান্ড্যান্ট জানান, সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে তারা সতর্ক ছিলেন। অনেক জেলায় কমান্ড্যান্ট কার্যালয় ঘেরাও করার চেষ্টা করেন উচ্ছৃঙ্খল সদস্যরা। এমন আলোচনা ওঠার পর কৌশলে বিভিন্ন ব্যারাক থেকে অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়।
জেলা কমান্ড্যান্টরা জানান, যেসব সাধারণ আনসার সদস্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের তালিকা করে সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ডিউটি থেকেও তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ১০ হাজারের মতো সাধারণ আনসার সদস্য অংশ নেন এবং তাদের তালিকা এরই মধ্যে জেলা পর্যায় থেকে সদরদপ্তরে এসেছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার রয়েছেন চার শতাধিক সদস্য। ঢাকার আশপাশের রয়েছেন ১৬৪ জন। তালিকায় ভোলার রয়েছেন ৩১ জন এবং বরিশাল রেঞ্জের শতাধিক আনসার সদস্য। তবে অনেক জেলা থেকে কেউ আসেননি বলে জানিয়েছেন জেলা কমান্ড্যান্টরা।
ঢাকার জেলা কমান্ড্যান্ট আলমগীর শিকদার সমকালকে বলেন, ‘আন্দোলনের প্রথম দিকেই সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়।’ আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৪০০ জনের তালিকা সদরদপ্তরে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।’
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) চার থানায় ৪২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১১ হাজার ১০০ আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সব মামলায় হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় ২০৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ হাজার অজ্ঞাত, রমনা থানায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ ও ৩ হাজার অজ্ঞাত, পল্টন থানায় ১১৪ জনের নাম উল্লেখ ও ৪ হাজার অজ্ঞাত এবং বিমানবন্দর থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও ১১শ জন অজ্ঞাত আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শাহবাগ থানায় ১৮৯ জন, রমনা থানায় ৯৮ জন, পল্টন থানায় ১১৩ জন এবং বিমানবন্দর থানায় ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে সাধারণ আনসার সদস্যরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঢাকায় আসার সময় তারা দুই সেট করে পোশাক নিয়ে আসেন। এ থেকে বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।’ তিনি বলেন, ‘আনসার সদস্যদের সঙ্গে বহিরাগত প্রবেশ করে সচিবালয় অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কারও আর আনসারে চাকরি করার সুযোগ নেই। প্রচলিত আইনে সবার বিচার হবে।’
তিনি জানান, সচিবালয় ঘেরাওয়ের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার কতটুকু দায়, তা নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।