চট্টগ্রামে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ভোগান্তি ও ডায়াগনস্টিক টেস্টে কমিশন বাণিজ্য বন্ধসহ ২১ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও যুব ক্যাব চট্টগ্রাম।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, এবং সঞ্চালনা করেন ক্যাব যুব গ্রুপের আবু হানিফ নোমান।
মানববন্ধনে বক্তব্য
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, সদরঘাট থানা সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন চৌধুরী, চকবাজার থানা সভাপতি আবদুল আলীম, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, সিদরাতুল মুনতাহা, রায়হান উদ্দীন, নাফিসা নবী, রাইসুল ইসলাম, এমদাদুল ইসলাম, ফয়েজ, ক্যাব মহানগরের সাজ্জাদ উদ্দীন, এডাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ফোরকান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন, আবরার আল ফয়সাল সিয়াম, ফজলে সোবহান সাকিব ও অধিকার চট্টগ্রামের ওসমান জাহাঙ্গীর।
বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস থাকলেও দীর্ঘ দেড় দশকে পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। ফলে অগ্নি ও বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মাত্র ২৬টি শয্যা থাকলেও প্রতিমাসে ৯০০ থেকে ১০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা (ইআইএ) ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু করায় সমালোচনার মুখে হাসপাতাল নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। বক্তারা যে কোনো অজুহাতে প্রকল্পে বিলম্ব না করে দ্রুত চট্টগ্রামে একটি পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান।
স্মারকলিপিতে উত্থাপিত ২১ দফা দাবি
মানববন্ধন শেষে ক্যাব নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীনের কাছে ২১ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
1. হাসপাতালের প্রতিটি গেটে তথ্যকেন্দ্র ও মানচিত্র স্থাপন।
2. রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ট্রলি/হুইলচেয়ারের চার্জ নির্ধারণ।
3. রোগী ও স্বজনদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা।
4. হাসপাতালের টয়লেট সংখ্যা বৃদ্ধি ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
5. হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার।
6. লিফটের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি ও চিকিৎসক-নার্সদের জন্য পৃথক লিফট স্থাপন।
7. হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পোর্টেবল বেডের ব্যবস্থা।
8. দালালমুক্ত হাসপাতাল নিশ্চিতকরণ।
9. আয়া ও ওয়ার্ডবয়দের পরিচয়পত্র নিশ্চিত ও চাকরি স্থায়ী করা।
10. বাইরে বেশি খরচে টেস্ট করানো বন্ধ করে MRI, CT Scan, Echocardiography-এর সিরিয়াল সহজ করা।
11. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি।
12. বিকেলের পর ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ।
13. হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা।
14. দর্শনার্থীদের সীমিত সময়ের জন্য প্রবেশের অনুমতি।
15. হাসপাতালের চারপাশে পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার।
16. হটলাইন/হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করে অভিযোগ গ্রহণ।
17. মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের (এমআর) কার্যক্রম দিনের বেলায় নিয়ন্ত্রণ করা।
18. হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি।
ক্যাব নেতারা বলেন, দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ভালো মানের স্বাস্থ্যসেবা পাবে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমবে।