বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক ব্রিটিশ সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তার বোনের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় জাল নোটারি নথি ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন জমির অবৈধ বরাদ্দের বিষয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে উঠে এসেছে বিষয়টি।

দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট নিজ ও তার পরিবারের জন্য নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বরাদ্দ থেকে উপকৃত হয়েছেন।

সংস্থাটি আরও দাবি করছে, তিনি একটি ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেছেন।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চার্জশিটে বলা হয়েছে, দুদক এখন আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবে, যা প্রসিকিউশনের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে। অভিযোগ গ্রহণ হলে মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করবে।

টিউলিপ সিদ্দিক জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীত্বে থেকে পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী ছিলেন। এই অভিযোগ প্রকাশিত হলে তিনি ব্যাপক রাজনৈতিক চাপে পড়েন। তবে তিনি বরাবরই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছে যে তারা শেখ হাসিনার পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এ অভিযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবৈধ ব্যবহারের তদন্ত আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন দাবি, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা সরকারি জমি বরাদ্দের জন্য নিয়ম ভেঙেছেন এবং প্রচলিত বরাদ্দ পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জন্য জমি নিশ্চিত করেছেন।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘এটা তো কেবল টিপ অব দ্য আইসবার্গ। আরও অনেক অভিযোগ এখন দুদকের তদন্তাধীন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের বিশাল দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরবে।’

পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্প ঢাকার উপকণ্ঠে একটি বড় আবাসিক উন্নয়ন প্রকল্প। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, এই প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় ইতোমধ্যে একটি সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে টিউলিপ সিদ্দিক পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়ম পরিবর্তন ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এই জমি বরাদ্দ নিয়েছেন। তারা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত জমি লটারির পদ্ধতি পাশ কাটিয়ে প্লটের মালিক হন।

এ ছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের আরও অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক একটি ভুয়া নোটারি নথির মাধ্যমে ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেন।

এই নোটারি নথিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তবে তিনি এই নথি স্বাক্ষর করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। চার্জশিটে বলা হয়েছে, তিনি জানিয়েছেন, ‘যদিও সিলটি আমার নামে, কিন্তু স্বাক্ষরটি আমার নয়।’ সিরাজুল আরও জানান, তিনি শুধুমাত্র তার চেম্বারে বসে নোটারি নথি অনুমোদন করেন এবং টিউলিপ কিংবা আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে তার আগে কোনো পরিচিতি ছিল না।

এই বিতর্কিত নথিটি ২০১৫ সালের, যখন টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য ছিলেন, তবে তখনো তিনি যুক্তরাজ্যের সরকারের মন্ত্রী হননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি, এই জালিয়াতির উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত সম্পত্তির মালিকানা গোপন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *